বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
সাংবাদিকের পা ভেঙে দেয়ার ১২ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি কেউ জেলা ছাত্রলীগ সেক্রেটারির বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাবনায় বিদ্যুতায়িত হয়ে ইসলামি মাদরাসার শিক্ষকের মৃত্যু ফেসবুকের মাধ্যমে মেয়েদের ব্ল্যাকমেইলিং করার অভিযোগে গ্রেপ্তার ৪ কাশিনাথপুরে ব্যাংক লোপাট, নতুন দুই কর্মকর্তার যোগদান, লেনদেন স্বাভাবিক জাতীয় শিশু দিবসে জেলা পরিষদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ চাটমোহরে করিমন চাপায় স্কুলছাত্রী নিহত, সড়ক অবরোধ ঈশ্বরদী জমজম হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ধর্ষণের পর আত্মগোপনে থাকা যুবক ঢাকা থেকে গ্রেফতার

পাবনা-৪ আসনে আ. লীগের মনোনয়ন পেতে ডিলুর উত্তরসূরীদের বিভক্তি

নিজস্ব প্রতিনিধি, পাবনামেইল টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৪ আসন (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) থেকে নৌকার টিকিট পাওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর তিন সন্তানসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য। ইতোমধ্যে প্রয়াত এই এমপির দুই ছেলে ও মেয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। মেয়ে জামাই ও খালাতো ভাই মনোনয়ন তুলবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

১৯৯৬ সাল থেকে টানা পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৪ (আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী) আসনে নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু। ২০১৪ সালে তিনি নির্বাচিত হয়ে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় নির্বাচনে মনোনয়ন বানিজ্য, কমিটি বানিজ্য, জমি দখল, বালুমহাল দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি ভাঙচুর ও মারপিট, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পে টেন্ডারবাজিসহ প্রকাশ্য নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। এসব ঘটনা দেশের সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে প্রচার হলে ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে আওয়ামীলীগ।

২০১৮ সালে শামসুর রহমান শরীফ দলীয় মনোনয়ন পেলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবের নির্বাচনী সভায় ডিলুপুত্র উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শিরহান শরিফ তমালের নেতৃত্বে হামলা হয়। সন্ত্রাসীরা হাবিবকে ছুরিকাঘাত করলে সরকার বিতর্কের মুখে পড়ে। পরবর্তীতে ২০২০ সালে শামসুর রহমান শরীফের মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা আলাদাভাবে নেতৃত্ব দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। তাদের ঘিরে বিভক্ত হয়ে পড়েন শামসুর রহমান শরীফের অনুসারী নেতাকর্মীরাও।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাংসদ ডিলুর মৃত্যুর পর স্ত্রী কামরুন্নাহার ও তিন ছেলে-মেয়ে, জামাই মনোনয়ন চাইলেও, দলের হাইকমান্ড ক্ষুব্ধ থাকায় তারা মনোনয়ন পাননি। ফলে, ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নরুজ্জামান বিশ্বাস।

এদিকে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেও ডিলু পরিবারের বিভক্তি দূর হয়নি। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে শনিবার মনোনয়ন পত্র নিয়েছেন সাবেক সাংসদের দুই ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গালিবুর রহমান শরীফ; সদস্য সাকিবুর রহমান শরীফ; মেয়ে মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাহজেবিন শিরিন পিয়া। মনোনয়ন তুলবেন বলে নিশ্চিত করেছেন জামাতা সাবেক পৌর মেয়র ও ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, খালাতো ভাই জেলা আওয়ামীলীগ নেতা বশির আহমেদ বকুলও ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামীলীগের এক নেতা বলেন, পরিবারের সদস্যদের সীমাহীন লোভের কারণে শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর সারা জীবনের রাজনৈতিক ত্যাগ ধূলিস্মাৎ হয়ে গেছে। স্ত্রী সন্তানদের কারণে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। তারা বাবার ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রচুর অবৈধ অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছে। এখন নির্বাচন সামনে রেখে আবারো হারানো রাজত্ব ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গালিবুর রহমান শরীফ লন্ডনে থাকেন। বাবা জীবিত থাকাকালীন ঈশ্বরদীতে তাঁর আনাগোনা ছিল কম। বাবা প্রয়াত হলে তিনি দেশে ফিরে রাজনীতিতে নামেন। উপনির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নৌকা চেয়েছিলেন। না পেয়ে ফিরে যান লন্ডনে। আরেক ছেলে সাকিবুর রহমান শরীফ কনক আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী নিয়ে কর্মসূচি পালন করেন। মসজিদ ও মাদ্রাসায়ও দান করেন।

মেয়ে মাহজেবিন শিরিন পিয়া প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িত। বাবা বেঁচে থাকতেই তিনি ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। তিনি উপজেলা, পৌর ও জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহের কথা নিশ্চিত করলেও, পারিবারিক বিরোধ নেই বলে দাবি করেছেন মাহজেবিন। তিনি বলেন, এক পরিবার থেকে আমরা ভাইবোন মনোনয়ন চাইলে সমস্যা কী। প্রধানমন্ত্রী যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষে আমরা কাজ করব।

ছেলে সাকিবুর রহমান শরীফ বলেন, বাগানে শত ফুল ফুটবে। এর মধ্যে সেরাটা বেছে নেবেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এখানে গ্রুপিং বা বিভেদ নেই, শুধু প্রতিযোগিতা আছে।

জামাই আবুল কালাম আজাদ মিন্টু বলেন, আমি কোন পরিবারের পরিচয়ে রাজনীতি করিনা। ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে আওয়ামীলীগে এসেছি। ঈশ^রদী পৌরসভায় মেয়র হয়েছি, দলীয় কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। নিজের পরিচয়ে আমার প্রার্থী হবার যোগ্যতা রয়েছে বলে আমি মনে করি।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, তারা তিন ভাইবোন জেলার কমিটিতে আছেন। মনোনয়ন সবাই চাইতে পারেন। তবে এক পরিবার থেকে তিন ভাইবোনের মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়টি শোভনীয় নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..