বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৭:০২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
সাংবাদিকের পা ভেঙে দেয়ার ১২ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি কেউ জেলা ছাত্রলীগ সেক্রেটারির বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাবনায় বিদ্যুতায়িত হয়ে ইসলামি মাদরাসার শিক্ষকের মৃত্যু ফেসবুকের মাধ্যমে মেয়েদের ব্ল্যাকমেইলিং করার অভিযোগে গ্রেপ্তার ৪ কাশিনাথপুরে ব্যাংক লোপাট, নতুন দুই কর্মকর্তার যোগদান, লেনদেন স্বাভাবিক জাতীয় শিশু দিবসে জেলা পরিষদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ চাটমোহরে করিমন চাপায় স্কুলছাত্রী নিহত, সড়ক অবরোধ ঈশ্বরদী জমজম হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ধর্ষণের পর আত্মগোপনে থাকা যুবক ঢাকা থেকে গ্রেফতার

ভাঙ্গুড়ায় অপহরণ করে ‘কবিরাজি কড়ি’ ও ৫ লাখ টাকা মুক্তপণ দাবী

নিজস্ব প্রতিনিধি, পাবনামেইল টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

শ্রী মেনারঞ্জন চন্দ্র দাস। বয়স ষাটের কাছাকাছি। পেশায় গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের বাড়িতে বেতের তৈরি বিভিন্ন জিনিসের মোড়ামতের কাজ করেন। তা থেকে যা পান তাই দিয়েই তার সংসার চলত। এলাকার লোকেরা তাকে বেতে হিসেবেই চেনেন। মাঝে মধ্যে শ্রমিক ও কাবিরাজি চিকিৎসার কাজ করে যা পায় তাই দিয়েই সাংসার চলে তার। নিজ জন্মস্থান উল্লাপাড়া উপজেলা হলেও ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের ময়দানদীঘি বাজার এলাকায় দীর্ঘ ২০/২৫ বছর যাবত বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু তিনি সম্প্রতি অপহরণের শিকার হয়ে ২৩ দিন পর কোন রকমের জীবন নিয়ে ফিরে এসে নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। ঘটনার বিষয়ে তার স্ত্রী সন্ধ্যা রানী বাদী হয়ে ভাঙ্গুড়া থানায় হেলঞ্চা গ্রামের আব্দুল হামিদ, তার স্ত্রী আছমা, শরিফুল, আরিফুল, তাড়াশ উপজেলার আবুল বাসারসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অপহরণ মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

মামলা, ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেনারঞ্জন চন্দ্র দাসের অভাবের সংসারে বেতের কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন লোককে কবিরাজি পরামর্শ ও চিকিৎসা দিয়ে আসতেন। মাঝে মধ্যে মানুষের বাড়িতে শ্রেমিকের কাজ ও মাছের ব্যবসাও করতেন। বর্তমানে ভাড়া থাকেন খানমরিচ ইউনিয়নের পূর্ব রামনগর গ্রামে। বেতের কাজের সুবাদে ছয় মাস পূর্বে পরিচয় হয় হেলেঞ্চা গ্রামের আব্দুল হামিদের স্ত্রী আছমা খাতুনের সাথে। আছমা খাতুন এলাকায় জিন হাজিরকারি কবিরাজি চিকিৎসা করে সাধারণ মানুষদের সাথে প্রতারণা করার একাধিক অভিযোগ আছে। তবে তিনি মেনারঞ্জন চন্দ্র দাসের সাথে আছমা খাতুন দেখা করে বলেন যে, তার কাছে ৭ টি জানোয়ার আছে। ৫ টি মুসলমান ও ২টি হিন্দু। তিনি মুসলমান হিসেবে ৫ টিকে বস করতে পারেন কিন্তু হিন্দু ২টিকে তিনি বস করতে পারছেন না। তাই হিন্দু রীতিতে কিছু নিয়মকানুন শিখতে হবে। তবে মেনারঞ্জন পরামর্শ দেন যে ভোগ দিতে পারেন। আর এ জন্য মেনারঞ্জনের নিকট কিছু টাকা দিয়ে ভোগের উপকরণ কিনতে বলেন। কথা মতো মেনারঞ্জন চন্দ্র দাস সেই টাকা দিয়ে ভোগের পণ্য (ফলসহ নানা উপকরণ) কিনে তার বাসায় ভোগ দেন। এক পর্যায়ে বাজার থেকে একটি কড়ি কিনে আনতে বলেন মনোরঞ্জন চন্দ্র দাস। আছমা খাতুন কড়িও কিনে আনেন। এখানেই ঘটনা নতুন মোড় নেন। আছমা খাতুন মনোরঞ্জন চন্দ্র দাসকে যে কড়ি প্রদান করেন তা ফেরত চাইলে মেনারঞ্জন তা ফেরতও দেন। কিন্তু আছম খাতুন বেকে বসেন। তিনি দাবী করেন তার ক্যাড়ামতি কবিরাজি কড়ি মেনারঞ্জন নিয়ে নকল কড়ি ফিরিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের সাথে একাধিক শালিশী বৈঠকে বসেও তার সুরাহ হয় নি এবং কবিরাজি কড়ির সত্যাতা মেলে নি। এরই রেশ ধরে গত ২০ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে মনোরঞ্জন চন্দ্র দাসকে পাটুল গ্রমের আরমানের বাড়ির সামনে থেকে সাদা মাইক্রোবাস নিয়ে ভাঙ্গুড়ার আসামীরা মনোরঞ্জন চন্দ্রকে একা পেয়ে মুখ ও চোখ বেধে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এভাবে তাকে তাড়াশ ও উল্লাপাড়ার বেশ কয়েক স্থানে দীর্ঘ ২৩ দিন আটকে রেখে কবিরাজি কড়ি ও ৫ লাখ টাকা দাবী করে, না পেয়ে তার উপর চালায় নির্মম নির্যাতন। কখনো লাঠি, কখনো কাঠের বাঠাম কখনো হাতুরী দিয়ে পিটিয়ে চালায় শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। সকালে একবার পিটিয়ে কবিরাজি কড়ি ও ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসতে তার স্ত্রীকে খবর দিতে বলতেন আবার বিকালে এই কায়দায় পেটাতেন অপহরণকারি চক্রের লোকজন। এদিকে মনোরঞ্জন চন্দ্রের স্ত্রী তার স্বামীর দেখা না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে খোঁজা খুঁিজ করে পরে থানা পুলিশের স্মরণাপন্ন হন।

ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশ মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে উল্লাপাড়া থানা পুলিশের সহায়তায় তাড়াশ থেকে তাকে উদ্ধার করেন। মেনারঞ্জন চন্দ্র দাস প্রায় মাসখানেক পর উদ্ধার হলে তিনি তাকে অপহরণ ও লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন। মেনারঞ্জন উদ্ধার হওয়ার পর থেকে আসামীরা পলাতক রয়েছেন।

ঘটনার বিষয়ে মেনারঞ্জন চন্দ্র দাস কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তার স্ত্রী থানায় অভিযোগ দেওয়ায় মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন আসামীপক্ষের লোকজন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে খানমরিচ ইউনিয়নের হেলেঞ্চা গ্রামের আব্দুল হামিদ, আছমা খাতুন, শরিফুল ও আরিফুলের বাড়িতে গিয়ে তাদের কাউকে পাওয়া যায় নি।

ঘটনার বিষয়ে আসামীদের একাধিক প্রতিবেশী বলেন, আছমা খাতুন কথিক জিন হাজির করে চিকিৎসার নামে দীর্ঘদিন সরল সহজ গ্রাম্য মানুষদের হয়রানি করে আসছেন। সম্প্রতি একজনকে তুলে নিয়ে আটকে রেখে বেদম মারপিট করে তাকে অসুস্থ্য অবস্থায় জীবন নিয়ে পালিয়ে এসেছেন।

খনমরিচ ইউয়িনয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন মিঠু বলেন, মনোরঞ্জন একজন অতি সাধারণ শান্ত স্বভাবের মানুষ। তাকে তুলে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করা বিষয়টি খুই দুঃখজনক।

ঘটনার বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলহাজ মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকীদেরও আটকের চেষ্টা অব্যহত আছে। পুলিশ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় তৎপর রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..