শোক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রকাশ্য জনসভায় পাবনা ২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবীরকে কুলাঙ্গার অভিহিত করে গালাগালি করেছেন দুলাই ইউপি চেয়ারম্যান ও সুজানগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান। বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যপক সমালোচনা। এমন বক্তব্যকে অনাকাঙ্খিত ও দলের ঐক্য বিনষ্টের চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবীর।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৫ আগস্ট বিকেলে চিনাখরা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দুলাই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দুলাই ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম শাজাহান। বক্তব্যটি নিজ ফেসবুকে লাইভও করেন তিনি। বক্তব্যকালে চেয়ারম্যান শাজাহান বলেন, সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবীর দুলাই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের শোক সভায় যোগ না দিয়ে , বিদ্রোহী নেতাদের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তিনি এলাকায় বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছেন। তিনি একজন কুলাঙ্গার, এমন কুলাঙ্গারকে আগামীতে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন না দিতে দলীয় সভানেত্রীর প্রতি দাবি জানাই।
ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্যে সভায় উপস্থিত তার সমর্থক নেতাকর্মীরা সমর্থন জানালেও পরবর্তীতে পরবর্তী সময়ে ফেসবুকে বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ব্যপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পক্ষে বিপক্ষে প্রকাশ্যে ও সামজিক মাধ্যমে বক্তব্য দেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুলাই ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম শাজাহান নিজ বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবীর গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সুজানগরের দশটি ইউনিয়নেই নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহীদের জন্য কাজ করেছেন। দলীয় কর্মীদের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। বিদ্রোহীদের সাথে নিয়ে তিনি দলে বিভাজন করেছেন। তিনি আওয়ামীলীগ নামধারী কুলাঙ্গার। দলের স্বার্থেই তাকে আগামীতে মনোয়ন না দিতে দাবী জানিয়েছি।
সিরাজুল ইসলাম শাজাহানের বক্তব্য সমর্থন করে ফেসবুকে পোস্ট দেন সুজানগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল ওহাবও। তিনি বলেন, আহমেদ ফিরোজ কবীরের দলে কোন অবদান নেই। তিনি জামাত বিএনপি সাথে আঁতাত করে চলেন। টিআর কাবিখাসহ কোন প্রকল্পের জন্য দলের চেয়ারম্যানদের মতামতের তোয়াক্কা করেন না। তিনি অবৈধ বালু দস্যুদেরও মদদ দেন। বিতর্কিত হওয়ায় তাকে মনোনয়ন না দেয়ার যে আহবান শাজাহান চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আমি তা সমর্থন করি।
এদিকে, সংসদ সদস্য আক্রমণ করে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সুজানগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীনসহ দলের অপর অংশের নেতাকর্মীরা।
শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, চেয়ারম্যান শাজাহান একজন চিহ্নিত দূর্নীতিবাজ। তিনি স্কুল কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য, করোনার সরকারী সহয়তা ও ভিজিডির অর্থ আত্মসাৎ করে ধরা পড়েছেন। ইউপি নির্বাচনে সংসদ সদস্যের প্রকাশ্যে নির্বাচনী কাজে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই, তারপরেও তিনি নৌকার প্রার্থীদের জন্য কাজ করেছেন। টিআর কাবিখায় অসৎ লোকের হাতে অর্থ তুলে না দিয়ে নিজে তদারকি করে কাজ করেন। এতেই দুর্ণীতি গ্রস্থ মানুষের বিরাগ ভাজন হয়েছেন তিনি।
সুজানগর পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ফেরদৌস আলম ফিরোজ বলেন, সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবীর এ অঞ্চলের আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর সহচর আহমেদ তফিজ উদ্দিনের যোগ্য সন্তান। আওয়ামীলীগে তার পরিবারের ত্যাগ, সততার কথা দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাও জানেন। তাকে নিয়ে এমন বিষোদগার, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাই। আমরা দলীয় ফোরামে এর বিচার চাইবো।
এদিকে, দলের একাংশের নেতাকর্মীদের বিষোদগার ও অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবীর বলেন, আমি সব সময় দলের ঐক্য ধরে রাখতে চেষ্টা করেছি। সবাইকে সাথে নিয়েই আগামী নির্বাচন করতে হবে। এ সময় শাজাহান চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্য অনাকাঙ্খিত ও আপত্তিকর হলেও আমি এর প্রতিউত্তর দিতে চাইনা। আমি আমার নেতাকর্মীদের ধৈর্য্য ধরতে বলেছি। টিআর কাবিখার কাজে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে দল ও নেত্রীর প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমি কঠোর হয়েছি। আশা করছি যারা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
Leave a Reply