পাবনার সুজানগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামান শাহিনের বিরুদ্ধে নিজ বলয়ের আধিপত্য বিস্তারে দলীয় নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন খোদ সভাপতি আব্দুল ওহাব। সোমবার দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করে দলীয় সভানেত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তবে এসব অভিযোগ অসত্য দাবী করেছেন শাহিনুজ্জামান শাহিন।
সুজানগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, শাহিনুজ্জামান শাহিন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই দলে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে ওঠেন। জামায়াত-বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিজ গ্রুপে ভিড়িয়ে ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মারধোর, চাঁদাবাজী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলে নেয়াসহ সকল অপকর্মের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হন। নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ ভাবে নদী থেকে বালি উত্তোলন, টেম্পু ষ্ট্যান্ডে চাঁদাবাজী, ঠিকাদারী ব্যবসায় নিয়ন্ত্রন, জলমহাল নিয়ন্ত্রন শুরু করেন। এসব কাজে বাধা দেয়ায় শাহিনের সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া।
এসব অপকর্ম নির্বিঘœ করতে গত ১৩ মার্চ সুজানগর পৌরসভার কর্মচারী আল আমিন হত্যাকান্ডকে রাজনৈতিক রং দিয়ে আওয়ামীলীগের ও তার অঙ্গ সংগঠনের ২৬ জন পদ ধারীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়েরের মাধ্যমে এলাকাছাড়া করার পাঁয়তারা করছেন।
আব্দুল ওহাব আরো বলেন, জমিজমা সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধে আল আমিন খুন হলেও প্রকৃত অপরাধীদেও আসামী না করে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে শাহিনের অপকর্মের বিরোধিতাকারী দলীয় নেতাকর্মীদের ফাঁসানো হয়েছে। তারা হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া পরিবারের পাশে না দাড়িয়ে আমার নেতাকর্মীদের ফাঁসাতে পেরে তারা ঈদ উৎসবে মেতেছেন।
শুধু তাই নয়, শাহিনুজ্জামান শাহিন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক প্রাপ্ত প্রার্থীদের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে সকল ইউনিয়নে তার লোকজনকে দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে হয়রানী করা হয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবিরসহ জেলা আওয়ামীলীগে বার বার অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার মেলেনি। আমি আওয়ামীলীগের রাজনীতির স্বার্থে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। একই সাথে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।
সুজানগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শাহিনুজ্জামান শাহিন এসব অভিযোগ অসত্য দাবী করে বলেন, আব্দুল ওহাব সংবাদ সম্মেলনে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতরা কোন দলের সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়, যাদের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন তারা হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষ ভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল। হত্যাকারীদের বাচাতেই তার এই অবস্থান প্রমান করে এই হত্যাকান্ডে তারও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আল আমিন আওয়ামী পরিবারের সন্তান হওয়ায় হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার দাবী করছি। আধিপত্য বিস্তার, বালি উত্তোলন ও দলের গ্রুপিং সৃষ্টিতে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবীও তার। দলে শৃংখলা ফেরাতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করেছি।
পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের বিরোধ দীর্ঘদিনের। আমরা অনেক বার বিষয়টি নিরসন করার জন্য চেষ্টা করেও সফল হতে পারিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি দুলাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাগরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিন চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক সাঈদুর রহমান সাঈদ, আহমেদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বিশ^াস, রানীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তৌফিকুল আলম পিযূস, তাতিবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মতীন মৃধাসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
Leave a Reply