উৎকোচ নিয়ে নিয়োগ ধামাচাপা দিতে পাবনায় শিক্ষকদের মারধোরের অভিযোগ উঠেছে সুজানগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও দুলাই ইউপি চেয়াম্যান সিরাজুল ইসলাম শাহজাহানের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি জেলার দুলাই ইউনিয়নের চিনাখরা স্কুল এন্ড কলেজে ঘটেছে এই ঘটনা। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। বিচার দাবী করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা।
চিনাখরা স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সাবেক বিদুৎসাহী সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই অনিয়মতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারতিায় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করায় গত বছরে নতুন কমিটিতে আমাকে বাদ দিয়ে তার নিজ সন্তানকে বিদুৎসাহী সদস্য মনোনীত করেন। সম্প্রতি ভূয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আইসিটি বিষয়ে প্রভাষক পদে সোহেল রানা ও জীব বিজ্ঞান বিষয়ে প্রদর্শক পদে সোলায়মান কবির নামের দুজনকে নিয়োগ দেন তিনি।
তিনি আরো জানান, সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ থাকার সুযোগে সভাপতি স্থানীয় একটি পত্রিয়ার সাথে যোগসাজসে ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর তারিখ দেখিয়ে গোপনে ব্যাক ডেটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সেই পত্রিকায় মুজিববর্ষের লোগো থাকায় বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ভূয়া সেই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেই সভাপতি অনিয়ম ও ঘুষের বিনিময়ে ওই দুইজনকে ২০২০ সালের ২রা মে নিয়োগ দিলে আমি রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগের পর শিক্ষা বোর্ডর নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তদন্তের দায়িত্ব দেন। পরে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন আলী তদন্ত করে অভিযুক্ত সভাপতি ও তৎকালীন অধ্যক্ষের লিখিত জবাবে বিধি বহির্ভূত ভাবে নিয়োগের সত্যতা পান।
এ বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনা ধামাচাপা দিতে সভাপতি পুন: তদন্তের আবেদন করতে উদ্যোগ নেন। সেই আবেদনে সকল শিক্ষকের স্বাক্ষর সংযুক্ত করতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরেও শিক্ষকদের কেলেজে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলেন। তাতে রাজি না হলে অনুসারীদের দিয়ে মারধোর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। ।
বিষয়টি আমরা তাৎক্ষনিক জানতে পারলেও ভুক্তভোগী শিক্ষকরা প্রাণের ভয়ে সভাপতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করতে রাজী হননি। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পরার পর এলাকায় নিন্দার ঝড় উঠছে।
চিনাখরা হাই স্কুল এ- কলেজের শিক্ষক আব্দুল মালেক অভিযোগ করেন, সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতা ও শিক্ষকদের মারপিটের ঘটনা নিত্যনৈমিত্যিক ঘটনা। কেবল নিয়োগ বানিজ্যই নয়, ক্ষমতার অপব্যবহারে কলেজ উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ লুট, তহবিলের টাকা তুলে ব্যায় করেন সভাপতি। বিরুদ্ধে। তার প্রশ্রয়ে অনুসারী সন্ত্রাসীরা কলেজে ক্যম্পাসে গড়ে তুলেছে মাদকের আখরা। এসবের প্রতিবাদ করলেই নেমে আসে নির্মম নির্যাতন।
এদিকে তদন্তে নিয়োগে অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে প্রাথমিক ভাবে প্রমান মিলেছে বলে জানিয়েছেন সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন আলী। তিনি বলেন, শিক্ষাবোর্ডেও নির্দেশে অভিযুক্ত সভাপতি ও অধ্যক্ষের নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্যাদি ও লিখিত জবাব চাওয়া হয়। তাদেও জবাবে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও অন্যান্য কাগজ পত্রে গড়মিলের প্রমান মিলেছে। পাশাপাশি চলতি বছরের ৮ জুন বাংলাদেশ শিক্ষা ও তথ্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৯ পর্যন্ত হালনাগাদ তালিকায় ওই দুই শিক্ষকের নাম পাওয়া যায়নি। এসব বিষয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদেও বক্তব্যও অসঙ্গিতিপূর্ণ। আমি তদন্ত প্রতিবেদনটি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়ে দিয়েছি।
এ বিষয়ে চিনাখরা স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান বিষয়টিকে অস্বীকার করে বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমি কোন হস্তক্ষেপ করিনি। উৎকোচ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামান শাহিন বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমিও পেয়েছি। শাহজাহান সাহেবের মতো একজন নেতার এমন কান্ডে আমরা বিব্রত ও লজ্জিত। তবে যারা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অপকর্ম করেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন বলেও দাবী করেন তিনি।
ফেসবুকে ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন
Leave a Reply