নকল দুধ তৈরির সংবাদ প্রকাশের জেরে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় মানিক হোসেন নামে এক সাংবাদিককে পিটিয়ে পা ভেঙে দেয়ার ১২ দিনেও মামলার কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে আসামিরা। ঘটনার দিন রাতে আহত সাংবাদিকের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ২-৩ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরিবারের অভিযোগ, আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় তারা আতঙ্কে দিন পার করছেন। মামলা তুলে নিতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাদের চাপ দিচ্ছে। আহত মানিক হোসেন দৈনিক খোলা কাগজের ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। তিনি ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
এজাহারভুক্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পাবনার সাংবাদিক নেতারা। গত ২৪ এপ্রিল পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন সাংবাদিকরা।
জানা যায়, ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নের চক-লক্ষীকোল গ্রামের দুগ্ধ ব্যবসায়ী রাজীব এবং সদর ইউনিয়নের কৈডাঙ্গা নতুনপাড়া গ্রামের আবুল বাশার দীর্ঘদিন ধরে নকল দুধ তৈরির করে বাজারজাত করছিল। এ নিয়ে কিছুদিন আগে সাংবাদিক মানিকসহ কয়েকজন সাংবাদিক পুঁইবিল গ্রামে একটি বাড়িতে গিয়ে নকল দুধ তৈরির ভিডিও ধারণ করেন। তারা জানতে পারেন নকল দুধ তৈরি করছে চক লক্ষীকোল গ্রামের দুগ্ধ ব্যবসায়ী রাজীব। এসব ভিডিও উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনকে দেখানো হয়। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মতবিনিময় সভায় বক্তারা ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। পরে এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজিব আহমেদ ও আবুল বাশারের নেতৃত্বে বায়েজিদ, রাজিব ও মাহাতাব সহ ৮/৯ জন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী মঙ্গলবার সকালে পুঁইবিল-চক লক্ষীকোল সড়কে মানিককে একা পেয়ে পিটিয়ে পা ভেঙে দেয়। স্থানীয়রা প্রথমে মানিককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রেরণ করে। সেখানেও তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
নির্যাতিত সাংবাদিকের বাবা ইসমাইল হোসেন বলেন, উল্লেখিত পাঁচ আসামির মধ্যে চারজন জামিনে এসে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহারের জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছে। আমরা আতঙ্কে আছি।
আহত সাংবাদিক মানিক হোসেন বলেন, নকল দুধ তৈরির সংবাদ প্রকাশ করার জেরে নকল দুধ তৈরির ব্যবসায়ীরা বাড়িতে এসে হুমকি দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল একটি সংবাদ সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরার পথে আমাকে একা পেয়ে পিটিয়ে পা ভেঙে দেয় এবং সেই পেটানোর ভিডিও করে হামলাকারী বায়েজিদ। এসময় আমার মোটরসাইকেল, চাবি ও দুইটি মোবাইল কেড়ে নেয়। পুলিশ মোটরসাইকেলটি উদ্ধার হলেও এখনো আমার দুটি ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়নি। এখন আমি আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। আসামি গ্রেপ্তারসহ চুরি হওয়া মোবাইল ফোর উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. রায়হান আলী ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কস্টিক সোডা, চিনি , মাথায় ব্যবহার করা সেম্পু ও সয়াবিন তেল দিয়ে নকল দুধ তৈরি করে আসছে একটি চক্র। এ নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এরপর উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কয়েকজন নকল দুধ ব্যবসায়ীকে মোটা অংকের জরিমানা করেন। একজন সংবাদকর্মী নকল দুধের সংবাদ প্রকাশ করায় তাকে সন্ত্রাসী দিয়ে পিটিয়ে তার পা ভেঙ্গে দেয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তার সহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।