নির্বাচনের বছর না পেরোতেই প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন পাবনা মোটর মালিক গ্রুপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। পরষ্পরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে সভাপতির সদস্য পদ বাতিল, পাল্টা বহিষ্কার পাল্টাপাল্টি সাধারণ সভা আহবান করছেন তারা। এতে ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির ভাবমূর্তি তলানীতে ঠেকেছে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রয়া ব্যাক্ত করছেন সাধারণ মোটর মালিক ও সংগঠনের সদস্যরা।
পাবনা মোটর মালিক গ্রুপ সুত্রে জানা যায়, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী এম এ কাফি সরকার সভাপতি ও রাজদূত পরিবহনের মালিক মমিনুল ইসলাম মমিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
নির্বাচনের পর থেকেই সংগঠন পরিচালনা নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কিছু দিনের মধ্যেই কার্যকরী পরিষদের সদস্যরাও দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েন। মূলত অর্থিক নানা বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই তাদের দুজনের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয় বলে মোটর মালিক গ্রুপরে সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন। ক্রমেই সে বিরোধ প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে রুপ নেয়।
তবে সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতা ও গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপ সমর্থন না করায় সভাপতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তার অনৈতিক আবদার পূরণ না করায় তিনি সংগঠনের প্রদেয় ছাড়পত্রের টাকা দেয়াও বন্ধ করেন। কার্যনির্বাহী পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের সাথে আছেন বলে দাবী মমিনুল ইসলামের।
তিনি বলেন, নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সভাপতি এম এ কাফি সরকার দীর্ঘদিন আগের বিল ভাউচারের টাকা দাবী করে বসেন। বিধিসম্মত না হওয়ায় সেগুলো দেয়া সম্ভব হয়নি। এরপর থেকেই তিনি আমার প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ প্রকাশ করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে সমিতির কোন আইন কানুন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ছাড়পত্রের টাকা দেয়া বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে সমিতির কার্যক্রম নিয়ে সভাপতি নানা ধরনের মিথ্যাচার ও বিষোদগার করতে শুরু করেন। একের পর এক বিভিন্ন দপ্তরে অসত্য তথ্য দিয়ে পত্র দিতে থাকেন। বারবার বলেও বিষয়টির কোন সুরাহা না হওয়ায় গত এপ্রিল মাসে সংগঠনের ১৭ জন নির্বাহী সদস্যের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়। পরে পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মোশাররফ হোসেন, পৌর মেয়র শরিফ উদ্দিন প্রধানের উপস্থিতিতে বৈঠকে বিষয়টির সমঝোতা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সমঝোতা বৈঠকের সিদ্ধান্তেরও তোয়াক্কা না করে তিনি নিজের মতো চলতে থাকায় অনাস্থা প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত পত্র বানিজ্য মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হয়। গত ২৪ নভেম্বরে এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রনালয় থেকে বিষয়টির তদন্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন জমার আগেই সাধারণ সদস্যদের বিভ্রান্ত করতে সভাপতি এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে সাধারণ সভা আহবান করেছেন। আমরা এতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সাধারণ সদস্যদের আহবান জানিয়েছি।
তবে, উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য অসত্য দাবী করে পাবনা মোটর মালিক গ্রুপের সভাপতি এম এ কাফি সরকার বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর সাধারণ ভোটারদের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমি সংগঠনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও কল্যাণমূখী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলামকে অনুরোধ করি। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই তিনি মাসিক বৈঠকে ভূয়া বিল ভাউচার করে সংগঠনের তহবিল তছরূপ করতে থাকেন। সংগঠনের তহবিল খরচের বানোয়াট ব্যলান্স শীট তৈরী করে মোটা অংকের টাকা আত্মসাতের পরিকল্পনা করেন। আমি তাতে বাধা দিয়ে, প্রতি বৈঠকের তিনদিন পূর্বেই গঠনতন্ত্র মোতাবেক বিল ভাউচার ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি যাচাইয়ের জন্য চাইলে তিনি তা করেননি। মালিকদের দেয়া গাড়ি ছাড়পত্রের টাকা লুটপাটের প্রতিবাদে আমি আমার সকল গাড়ির ছাড়পত্রের টাকা দেয়া বন্ধ করেছি।
তিনি আরো বলেন, সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম মমিন নির্বাহী পরিষদের সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে কাউকে প্রলোভনে ফেলে অনাস্থা প্রস্তাবের নাটক সাজিয়েছে। সংগঠনের তহবিল সংকটের জন্য সবার অনুরোধে নিজের টাকা অগ্রিম খরচ করে উন্নয়ন কাজ করেছি। আমার প্রাপ্য টাকাও তারা দেননি। অথচ, নীতিমালায় না থাকলেও প্রতি মাসে তারা অবৈধভাবে ভাতার টাকা তুলছেন।
শুধু তাই নয়, স্বেচ্ছাচারিতায় রুট পারমিট ও চেইন নিয়ন্ত্রণ করায় অনেক মালিককে পথে বসতে হচ্ছে। তাদের অপকর্মের জন্য গত কয়েক মাসে অন্তত ৫ জন মালিক তাদের গাড়ি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে। অসহায় সেসকল মালিকের পক্ষে থাকায় তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন।
এদিকে, পাবনা মোটর মালিক গ্রুপের সভাপতি ও সম্পাদকের প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই সংগঠনের সাবেক নেতৃবৃন্দরাও। তবে নিজ পরিবহনের চেইন বাতিলের ভয়ে নাম প্রকাশ করে কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
তারা জানান, বানরের হাতে খুন্তা গেলে যা হয়, ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির সেই পরিণতি হয়েছে। দ্বন্দ্ব সংঘাত নিরসন করে সাধারণ মালিকদের জন্য ব্যবসাবান্ধব কল্যাণমূখী কার্যক্রম গ্রহণের দাবীও জানান তারা।
পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ^াস রাসেল হোসেন জানান, মোটর মালিক গ্রুপের উভয়পক্ষের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। দ্রুতই তাদের নিয়ে বৈঠকে বসা হবে।
Leave a Reply