ফুলেল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় একুশে পুরষ্কার প্রাপ্ত সাংবাদিক ভাষা সংগ্রামী রণেশ মৈত্রর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ও সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর পাবনা মহাশ্মশানে দাহ করা হয় বরেণ্য এই কলম সৈনিকের মরদেহ। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণে আগতরা বলেন, বণার্ঢ্য জীবনের অধিকারী রণেশ মৈত্র বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মে, সৃষ্টিতে।
শুক্রবার বিকেলে পাবনা মহাশ্মশানে তাঁর এই শেষকৃত্য নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে শেষ করা হয়। শোষিত মানুষের অধিকার আদায়ে যে শহরে শুরু হয়েছিলো রাজনৈতিক জীবন, শুক্রবার সে প্রিয় পাবনার নিজ বাড়িতে নিথর দেহে ফিরলেন সাংবাদিক, রাজনীতিক রণেশ মৈত্র। অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময়ের রাজনীতি, সাংবাদিকতার বর্ণাঢ্য ৯০ বছরের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে গত ২৬ সেপ্টেম্বর। ঢাকার পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
প্রিয় অভিভাবকের বিদায়ে স্বজন, সহকর্মীদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
স্বজনরা জানান, প্রবাসী পুত্র ও কন্যার অপেক্ষায় কয়েকদিন ঢাকায় হিমঘরে মরদেহ রাখার পর, শুক্রবার ভোরে পাবনার উদ্দেশ্যে রওনা হয় তাঁর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি। দুপুর সোয়া ১ টার দিকে রণেশ মৈত্রের পাবনা শহরের বেলতলাস্থ বাসভবনে এসে পৌঁছায়। সেখান থেকে পারিবারিক কাজকর্ম শেষে দুপুর ২ টায় মরদেহ নেয়া হয় পাবনা শহরের বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে। সেখানে ঘন্টাব্যাপী রাখা হয়।
পরে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার গার্ড অব অনার প্রদান করেন পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনা ও পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জুয়েল।
ডেপুটি স্পীকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপি, পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, জেলা পরিষদ প্রশাসক রেজাউল রহিম লাল, জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী, নব নির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসম আব্দুর রহিম পাকন, অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি, জেলা আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাসদের সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম রাঙা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনসহ নানা শ্রেনিপেশার মানুষ ফুলের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান।
শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু এমপি বলেন, জাতির পিতার একজন প্রিয় মানুষ ছিলেন রণেশ মৈত্র। সাংবাদিকতা ও সাহিত্যে তাঁর ছিল সাবলীল পদচারণা। তার মৃত্যু শুধু পাবনার নয়, দেশের জন্য অপূরণীয় এক ক্ষতি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও কলামিস্ট, সাংবাদিকদের নিকট অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব রণেশ মৈত্রের মৃত্যুতে দেশ একজন জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্বকে হারাল।
জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি বলেন, রণেশ মৈত্র মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে রাজপথে ও লেখনীতে একযোগে লড়াই করেছেন । জেল জুলুম, প্রলোভনে কখনোই আদর্শচ্যুত হননি। কারাগার জীবনের সাথী রণেশ মৈত্রর কথা আত্মজীবনীতে লিখেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানও। তাঁর মৃত্যুুতে পাবনার রাজনৈতিক অঙ্গণে এক উজ্জল নক্ষত্রকে হারালো।
সাংবাদিকদের অধিকার আদায়, নিপীড়নের বিরুদ্ধে আজীবন সোচ্চার ছিলেন দেশবরেন্য এই সাংবাদিক। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পাবনা প্রেসক্লাব। জীবনের শেষ দিনগুলোতেও নিয়মিত পত্রিকায় কলাম লিখেছেন এই কলম যোদ্ধা। বিকেল সাড়ে তিনটায় অন্তিম যাত্রায় শেষ বারের মতো মরদেহ নিয়ে আসা হয় তার প্রিয় প্রেসক্লাব চত্বরে। পাবনার সাংবাদিকতার বাতিঘরকে অশ্রুসিক্ত নয়নে স্মরণ করেন সহকর্মীরা।
এ সময় সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল মতীন খান, সাবেক সম্পাদক আঁখিনুর ইসলাম রেমন ও রণেশ মৈত্রের পুত্র প্রবীর মৈত্র।
সাড়ে তিনটায় তাঁকে নেয়া হয় পাবনা জয়কালী বাড়ি মন্দির প্রাঙ্গনে। ধর্মীয় আচার ও রীতিমতো পালনের পর তাঁকে নেয়া হয় পাবনা মহাশ্মশানে। সেখানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
Leave a Reply