ফেরি সংকটে প্রায় দু’মাস ধরে কাজিরহাট-অরিচা রুটে চলাচল চরম ব্যাহত। শনিবারও তিনশতাধিক ট্রাক পারের অপেক্ষায় পাবনার কাজিরহাট ঘাটে থাকতে দেখা যায়। ফেরি স্বল্পতার কারণে এ নৌরুটে যাতায়াতের বিদ্যমান ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে; যার ফলে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলায় যাতায়াতকারী যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শনিবার তিনশতাধিক যানবাহন পারের অপেক্ষায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। টার্মিনাল এলাকায় তাদের জন্য পর্যাপ্ত টয়লেট সুবিধা না থাকায় চরমভাবে কষ্টভোগ করছেন ঘাটে অবস্থানরতরা।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন ট্রাক, বাস, কার, মাইক্রোবাসে দিনরাত থাকতে হচ্ছে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা লোকগুলোকে। ক্ষতিক্ষস্ত ব্যক্তিরা জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ট্রাকশ্রমিক, নারী ও শিশুরা। ভাসমান দোকান থেকে অনিরাপদ খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। কজিরহাট ফেরি ঘাটের টার্মিনাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট আবুল কাইয়ম বলেন, এ রুটের বিদ্যমান সমস্যার সমাধানের একটাই পথ-সেটি হলো আরো ফেরি যোগ করতে হবে। এর বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ পরিবহন করপোরেশনের কাজিরহাট অফিসের ব্যবস্থাপক মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, পাঁচটির মধ্যে তিনটি ফেরি চলাচলের বাইরে রয়েছে। ২ জানুয়ারি থেকে মেরামতের জন্য ফেরি কপোতি আরিচা ঘাটে নোঙর করা হয়েছে। এখন ক্যামিলী ও কদম নামে দু’টি ফেরি চলাচল করছে। তাও আবার মাঝে মধ্যে একটি ফেরি অকেজো হয়ে পড়ে। অন্য এক কর্মকর্তা জানান, প্রায় দু’মাসের অধিক এ ঘাটে দিনরাত ৪ শ’ থেকে ৫শ’ ট্রাকের সারিবদ্ধ থেকেই যাচ্ছে। যতদিন আরো ২ থেকে ৩টি ফেরি এ রুটে যোগ না হবে; ততদিন সমস্যা থেকেই যাবে।
তিনি জানান, নদীপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ২৮ ডিসেম্বর রো-রো ফেরি শাহ মখদুমকে পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া ফেরি সার্ভিসে পাঠানো হয় এবং ২৪ ডিসেম্বর কে-টাইপ ফেরি ফরিদপুরীকে মাওয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটে পাঠানো হয়েছে। ট্রাক চালক মোমিনুল ইসলাম যিনি নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার জন্য যশোর থেকে ঘাটে এসে তিনদিন অবস্থান করছেন। গতানুগতিক একই সমস্যা অর্থাৎ টয়লেট, গোসল-খাওয়া-থাকার সমস্যায় পড়েছেন। আলমাস আলী নামে আরেক এক ট্রাক চালক জানান, বুধবার রাতে তিনি কাজিরহাট ঘাটে পৌঁছান। শনিবার পর্যন্ত ফেরির টিকিট কাটতে পারেননি তিনি। হাসেম ও আব্দুল মিয়াসহ আরো অনেক ট্রাক চালক জানান, নদী পার হতে তাদের ফেরি ঘাটে পাঁট-ছয়দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। শনিবার বিকেল ৫টার দিকে কাজিরহাটে প্রায় ২৫০টি পণ্য বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনকে কাজিরহাটে সারিবদ্ধ অবস্থায় দেখা গেছে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি কাজিরহাট ফেরি ঘাট ব্যবস্থাপক মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, কয়েক মাস যাবত ঘাট অচলাবস্থায় থাকলেও পল্টুন স্বল্পতার কারণে ফেরি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ফেরিঘাটে ঘাট-পল্টুন বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি অনেকবার জানিয়েছি, পল্টুন ও ঘাট না বাড়ালে ফেরিঘাটের অচলাবস্থা কাটানো সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা দূরীকরণে ডেপুটেড ফেরিগুলো সার্ভিসে যোগ দিলে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে।
Leave a Reply