রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ০৬:৩৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
অফিস অটোমেশন সিষ্টেমের উদ্বোধন, কাগজবিহীন অফিস হতে চলেছে পাবিপ্রবি বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে পাবিপ্রবিতে আলোচনা সভা পাবিপ্রবিতে প্রথমবর্ষের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার সকল আয়োজন সম্পন্ন আন-নাসর রমাদান কুইজ ও কর্জে হাসানা কার্যক্রম শুরু পাবনায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নতুন বর্ষবরণ রূপপুর প্রকল্পের গাড়ি চালক সম্রাট হত্যা মামলার মূলহোতা মমিন গ্রেফতার নিখোঁজের দুইদিন পর রূপপুর প্রকল্পের গাড়িচালকের মরদেহ উদ্ধার বাউয়েট এ, “সরকারী খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রম” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত নিখোঁজের দুইদিন পর যমুনা নদী থেকে কিশোরের বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার চরতারাপুরে বালু মহলে পুলিশের ওপর চেয়ারম্যানের লোকজনের হামলা, সরঞ্জাম জব্দ

তালিমনগর সরঃ প্রাথঃ বিদ্যালয়ে ২৫ শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে শিক্ষাকার্যক্রম!

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনামেইল টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • প্রকাশিত Thursday, 7 April, 2022
Pabnamail24

পাবনার বেড়া উপজেলার মাশুমদিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ১০৫ নং তালিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যালয়টির এই বেহাল দশা। তবে প্রধান শিক্ষক কৌশলে ৮৪ জন শিক্ষার্থীর নাম রেজিস্টারে লিখে রেখেছেন বলে জানা গেছে। যাদের সবাই আশপাশের কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষকের দেয়া তথ্য মোতাবেক (ভূয়া নামের তালিকা) শিশু শ্রেণিতে ২০ জন, প্রথম শ্রেণিতে ২০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১০ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ১০ জন এবং ৫ম শ্রেণিতে ১২ জন শিক্ষার্থীর নাম রেজিস্টার খাতায় লেখা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক জানান, শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৫ জন। এদের মধ্যে নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হয় ১০-১২ জন করে শিক্ষার্থী। আর রমজান মাসে কমতে কমতে সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ জনে। ৬ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে মাত্র ১ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছেন। অথচ ওই বিদ্যালয়েই দেওয়া হয়েছে অর্ধ কোটি টাকার একটি ভবন। প্রধান শিক্ষকের উদাসীনতার কারণেই এমন করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক জানিয়েছেন।

জানা গেছে, বেড়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে মাশুমদিয়া ইউনিয়নের তালিমনগর গ্রামে অবস্থিত ১০৫ নং তালিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এলাকায় শিক্ষা বিস্তার ও জনমানুষকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে এলাকার সচেতন ও গুণী লোকজনদের সহযোগিতায় ১৯৮৯ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। একসময় ভরপুর শিক্ষার্থী ছিল এই বিদ্যালয়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে পড়ালেখার মান, বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় বিদ্যালয় থেকে ঝড়তে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে গত দুই বছর বিদ্যালয় বন্ধ থাকে। বিদ্যালয় খোলা হলেও প্রধান শিক্ষকের উদাসীনতার কারণে প্রভাব পড়ে বিদ্যালয়ের ওপর। ভেঙে পড়ে পড়ালেখার মান। ফলে শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ে এমনকি কিন্ডাগার্টেন স্কুলে ভর্তি হয়ে যায়।

বিদ্যালয়ের দুই জন সহকারী শিক্ষক জানান, করোনা ভাইরাসে বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার আগে প্রধান শিক্ষকের দেয়া তথ্য মতে ৮৪ শিক্ষার্থী ছিল। বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীরা অন্য বিদ্যালয়ে চলে যাওয়ায় বর্তমানে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ে মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থীকে পড়াতে রয়েছেন পাঁচজন শিক্ষক।

এদিকে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি খারাপের কারণে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফিরোজ উদ্দিন খান তার সন্তানকে নিজের স্কুল থেকে সড়িয়ে পার্শ্ববর্তী ‘সিনথি পাঠশালা’ নামের একটি কিন্ডারগার্টেনে নিয়ে ভর্তি করান।

রকি উদ্দিন খাঁজা নামে এক অভিভাবক বলেন,‘আমরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাই ভালো শিক্ষা অর্জনের জন্য। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা হয় না। যে কারণে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তানরাও অন্য বিদ্যালয়ে পড়ে। আমিও বাধ্য হয়ে আমার সন্তানকে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছি।’

রাশেদুল ইসলাম নামের আরেক অভিভাবক বলেন,‘বিদ্যালয়ে পড়ালেখার কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের পড়ায় না। আমরা বারবার পড়ালেখা নিয়ে অভিযোগ করেছি। এমনকি সভাপতিকে বলেও কোনো ফল পাইনি। বাধ্য হয়ে ছেলেকে ভালো পড়ালেখার জন্য অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছি।’

প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম অভিভাবকদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে শিক্ষকেরা সবাই মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মা সমাবেশ করে তাদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসতে পারিনি। স্থানীয় কিছু মানুষ নানানভাবে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভুল বুঝিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ে আসতে দিচ্ছে না। ফলে অভিভাবকেরা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সন্তানদের ভর্তি করে দিয়েছেন। সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক উত্তেজিত হয়ে বলে উঠেন, আমরাতো আর প্রতিদিন ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঁকে আনতে পারি না। আমাদের গভঃমেন্টের স্কুল শিক্ষার্থী একজন কেন ছাত্রছাত্রী না থাকলেও আমার কোন সমস্যা নেই।

বেড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন বলেন, ‘আমি অল্প দিন হলো এই উপজেলায় যোগদান করেছি। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন

বিভাগের আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!