শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০৮ অপরাহ্ন

পারমাণবিক যুগে দেশ, শাবাশ শেখের বেটি, শাবাশ বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি, পাবনামেইল টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহ সনদ আনুষ্ঠিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। গণভবনে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই সনদ তুলে দেওয়া হয়। অপরদিকে পাবনার রূপপুর প্রকল্প এলাকার মূল অনুষ্ঠানে রোসাটমের ডিজি আলেক্সি লিখাচেভ আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের কাছে পারমাণবিক জ্বালানির মডেল হস্তান্তর করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউরেনিয়াম হস্তান্তর উদ্বোধন করেন। এ হস্তান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারকারী দেশের তালিকায় ৩৩ তম দেশ হিসেবে বিশ্ব অঙ্গনে আত্মপ্রকাশ করলো বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেন, আজ এই জ্বালানি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক জ্বালানি শক্তিধর দেশে পরিণত হলো। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প কেবল একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ নয় এটি দুই দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। রাশিয়া সব সময় বাংলাদেশের পাশে আছে এবং থাকবে। এর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে তিনি বলেন, রাশিয়া শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে না, এই প্রকল্পের পুরো লাইফ সাইকেলে আমরা বাংলাদেশের পাশে থাকবো। পারমাণবিক জ্বালানির টেকসই সরবরাহ করা কারিগরি সেবা ও ব্যবহৃত জ্বালানির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব রাশিয়া গ্রহণ করেছে।


ভøাদিমির পুতিন আরো বলেন, ২০১৩ সালে রোসাটম বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে কাজ শুনু করে। গবেষণার কাজ শেষ হওয়ার পর ২০১৭ সালে চুল্লির প্রথম ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। দুই ইউনিট বিশিষ্ট ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের উৎপাদন ২৪ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন ২০২৬ সালে শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।
পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে যাওয়ার পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণে সক্ষম হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কার্বন নির্গমন করবে না, যা পরিবেশ ও মানুষের জন্য ভালো হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।


বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ২০ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করছে, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি জানিয়ে তিনি বলেন, তাছাড়া ভারতীয় বন্ধুরাও আমাদের সাহায্য করছে। তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই কাজ শেষ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বাংলাদেশের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা কেন্দ্রটির মূল প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ভাবে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের সবসময় পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান। পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমরা এই প্রকল্প নিয়েছি। রাশিয়া আমাদের সহযোগিতা করেছে। রূপপুর প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।
কোনো ধরনের দুর্যোগে যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নকশা ও নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। রাশিয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তাদের দেশে ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।


প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। রাশিয়ান ফেডারেশন এ তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তাদের দেশে ফেরত নেবে।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে হন্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে যোগ দেন এবং অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন মস্কোর ক্রেমলিন থেকে যোগ দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষাংশে কবিতার ভাষায় বলেন, ‘পিতা চেয়েছিল পরমানু যুগ শুরু হোক রূপপুরে, পিতার চাওয়া হয়েছে পূরণ কন্যার হাত ধরে। রূপপুর আজ রূপ পেয়েছে অর্জন অশেষ, এই না হলে শেখের বেটি শাবাশ বাংলাদেশ।
মন্ত্রী এ সময় আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশ হবে পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন দেশ। সেলক্ষ্যে তিনি কাজও শুরু করলেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। আজ তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করলো।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রকল্পের পরিচিতি তুলে ধওে বক্তব্য দেন, বিজ্ঞানী ও প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর। এরপর পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রথম ব্যাচের হস্তান্তর সম্পর্কিত ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আলী হোসেন। এরপর ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে বক্তব্য দেন, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি এজেন্সির মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি। এরপর রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ বক্তব্য রাখেন।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। যার মোট ব্যায়ের ৯০ শতাংশ দিবে রাশিয়া এবং বাকিটা বাংলাদেশ। প্রকল্পের স্থানীত্বকাল ধরা হয়েছে কমপক্ষে ৮০ বছর। এ প্রকল্পে সাড়ে চার হাজার রাশিয়ান ও বাংলাদেশের প্রায় ১৮ হাজার লোক সাড়ে ছয় বছর ধরে কাজ করেছে ।

রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুইটি ইউনিট থেকে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দিকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। আর ২০২৬ সালের মধ্যে পুরো দুইটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এ প্রকল্প জিডিপিতে ২ শতাংশ অবদান রাখবে বলেও জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..