পাবনায় আলোচিত ৩টি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৪ ছিনতাইকারীকে আগ্নেয়াস্ত্র, নগদ টাকা, মোটর সাইকেল ও অন্যান্য আলামতসহ গ্রেফতার করেছে পাবনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। মঙ্গলবার বিকালে পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী।
পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী সাংবাদিকদের জানান, গত ২২ সেপ্টেম্বর মনিরুল ইসলাম (৩৯) ব্যাংক থেকে ৩ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে বাড়ী ফেরার সময় পাবনা শহরের কালাচাঁদপাড়ার একটি গলির ভিতর আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার কাছে থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এরপর গত ১ অক্টোবর এসএম সামস ইকবাল (৪৪) জনতা ব্যাংকের আতাইকুলা শাখা থেকে ১৪ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে নিজ বাড়ীতে আসার পথে জালালপুর হাইওয়ে রাস্তার উপর গ্রেফতারকৃত ছিনতাইকারীরা তাকে তিনটি গুলি করে আহত করে। গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা টাকা ছিনতাই না করে মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
এরপর গত ৪ অক্টোবর দুপুরে শহরের মাহমুদা খাতুন (২৭) শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের কালাচাঁদপাড়া শাখা থেকে ৯ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে ব্যাটারী চালিত রিকশা যোগে নিজ বাড়ীতে ফেরার পথে শহরের গাছপাড়া পৌছামাত্র একটি পালসার মোটরসাইকেল নিয়ে তিন ছিনতাইকারী ব্যাটারী চালিত অটোরিকশার গতিরোধ করে। মোটরসাইকেলে থাকা তিনজন ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে মাহমুদা খাতুনের ৯ লক্ষ টাকাসহ একটি হ্যান্ড ব্যাগ জোড়পূর্বক ছিনিয়ে নেয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন এলে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে টাকার ব্যাগসহ মোটরসাইকেল নিয়ে বাইপাস রোড হয়ে পাবনা বাস টারমিনালের দিকে পালিয়ে যায়।
পাবনা শহরে একের পর এক দূর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাবনা সদর থানায় একটি দস্যূতার মামলা রজু হয়। যাার মামলা নং-০৮, তারিখ-০৫/১০/২০২২ইং। এরপর বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম একটি চৌকষ টীম নিয়ে মাঠে নামে। বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের পর সকল বিষয়াদি পর্যালোচনা করে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাবনা গোয়েন্দা পুলিশ ও সদর থানার একটি টিমের যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে পৌর এলাকার বাংলা ক্লিনিকের গলিতে ছদ্মবেশে ভাড়া নেওয়া জনৈক দেলোয়ার এর বসত বাড়ীর নিচ তলায় ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, পিস্তল, গুলি, মোবাইল, জামাকাপড়সহ ছিনতাইকারীদের মূল পরিকল্পনাকারী মাসুদ রানাকে (৩২) গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে মাসুদ রানার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার ভিকটিমের নিকট হইতে ছিনতাই করে নেওয়া মোবাইল, ব্যাগ এবং ৩ লক্ষ ৮৩ তেরাশি হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
আসামী মাসুদ রানাকে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে ৪ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করিলে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তার সাথে আরো ৪/৫ জন ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত। মাসুদ রানার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার সহযোগী ছিনতাইকারী আল আমিন (৩৬), ইব্রাহিম খান ওরফে মোর্শেদ খান ওরফে মামা (৪৯), আব্দুর রহিমকে (৩২) গ্রেফতার করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্বদানকারী পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ আলম জানান, মুলত ছিনতাইকারীদের নিদিষ্ট কোন স্থায়ী ঠিকানা নেই। তারা প্রথমে কোন একটি এলাকাকে টার্গেট করে ভুয়া নাম ঠিকানা দিয়ে নির্জন এলাকায় ছদ্মবেশে বাড়ী ভাড়া নেয়। তারা সেই এলাকার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বড় বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট দিনে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও বয়স্ক টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করে তাদের পিছু নেয়। নির্জন স্থানে পৌছামাত্র তাদের আক্রমন করে উপর্যুপরি গুলি চালিয়ে টাকা ছিনতাই করে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। এই চক্রের আরো দুইজন সদস্য পলাতক রয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতারের অভিযান অব্যহত রয়েছে।
Leave a Reply