পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের খয়ের বাগান গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন। ২০১২ সালে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে মার্স্টাস করেন। উচ্চ শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে নামেন চাকরির খোঁজে। একের পর এক চেষ্টাতেও, চাকরি না মেলায়, পতিত পড়ে থাকা এক বিঘা পৈতৃক জমিতে গড়েন আপেল, বাউ, বলসুন্দরী ও দেশী জাতের কুলের বাগান। আর তাতেই ভাগ্য খুলে যায় আব্দুল্লাহর।
কুলের বাগানে বিনিয়োগ করে আর পেছনে তাকাতে হয়নি আব্দুল্লাহকে। প্রতিবছর বছর ধারাবহিক লাভে বেড়েছে আব্দুল্লাহর বাগানের পরিসর। পরিশ্রম আর পরিকল্পিত বিনিয়োগে ১ বিঘা থেকে এ ১৮ বিঘার বিশাল জমিতে বিস্তৃত হয়েছে আব্দুল্লাহর কুলের সুবিশাল সামাজ্য। প্রতি মৌসুমে খরচ বাদে বাগান থেকে তার আয় প্রায় দশ লাখ টাকা। এমন সাফল্যে গ্রামবাসী ভালোবেসে তাকে ডাকেন, কুলের বাদশাহ আব্দুল্লাহ।
আব্দুল্লাহর দেখাদেখি কুল চাষে সাফল্য পেয়েছেন আশেপশের গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তারা। অল্প পুঁজি, ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগে ভাল লাভ হওয়ায় বাড়ছে চাষের পরিসর, আগ্রহী হচ্ছেন বেকার যুবকরাও। কেবল খয়ের বাগান গ্রামেই বরই বাগানের পরিধি ছাড়িয়েছে শত একরেরও বেশী।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মাস্টার্স শেষে বেকার বসে থাকায় বাগান করতে শুরু করি। কিন্তু দেখলাম এটি খুবই লাভজনক। অল্প বিনিয়োগ, বেশী পরিশ্রমও করতে হয় না। আবার ফল সংগ্রহ শেষে গাছ মুড়িয়ে দেয়ার পর ঐ জমিতে শাক,সবজি চাষ করা যায়। এখন আমার বাগানে বরই থেকে প্রতি বিঘায় খরচ বাদে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। পাশাপাশি অন্তত দশজনের কর্মসংস্থানও হয়েছে।
আব্দুল্লাহর সাফল্য অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে এলাকার বেকার যুবকদের। তার পথ ধরে কুল চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই।
আব্দুল্লাহর প্রতিবেশী বন্ধু সবুজ হোসেন বলেন, আব্দুল্লাহকে বাগান করতে দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম, খুব একটা লাভ হবে না। কিন্তু প্রথম বছরেই সে ভালো লাভ পেয়েছে। ওর বাগান দেখে এখন আমিও ১২ বিঘা জমিতে কুলের বাগান গড়েছি। মৌসুমের সময় ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে পাইকার এসে বরই নিয়ে যান। ব্যবসার পাশাপাশি বাগান থেকে বাড়তি আয়ে আমার স্বচ্ছলতা এসেছে।
আব্দুুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে কুলের দাম কিছুটা কম পেয়েছেন চাষীর্।া বিপনন ব্যবস্থায় দুর্বলতা থাকায় পাইকারী ও খুচরা বাজারে দামের ফারাক অনেক। এ সমস্যার সমাধান হলে, চাষীরা আরো লাভবান হবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, কুল চাষে লাভবনা হওয়ায় পাবনার চরাঞ্চলে তরুনদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। সদর ও ঈশ^রদী উপজেলার অনেক চাষী কুলের বাগান করে লাভবান হয়েছেন। নতুন উদ্যোক্তাদের কৃষি কর্মকর্তারা সব ধরণের পরামর্শ দেন। কৃষি ঋণ নিয়েও কাজ শুরু করতে পারেন বেকার যুবকরা। চলতি মৌসুমে ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাবনায় ৩৩৭ হেক্টর কুলের বাগান থেকে উৎপাদন হয়েছে ৮ মেট্রিক টন।
Leave a Reply