শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০১ অপরাহ্ন

ঘর দিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী লিলির চোখের আলো ফেরানোর দায়িত্বও নিলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, পাবনামেইল টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০২৩

আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া অসহায় এক অন্ধ নারীর জীবনের গল্প শুনে আবেগ তাড়িত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাৎক্ষণিক ভাবে ঐ নারীর চোখের উন্নত চিকিৎসার দায়িত্ব নেন তিনি। সাধারণ মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এমন ভালোবাসায় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বুধবার সকালে পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

ভাগ্যের বিড়ম্বনায় হঠাৎ অন্ধ হয়ে স্বামীর নির্মম আচরণে শিকার হন লিলি। চোখের চিকিৎসায় ভিটে মাটি বিক্রি করে গৃহহীণ হয়ে পড়ে লিলির বাবা মা। আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর পেয়ে তাদের আবারো হয়েছে মাথা গোজার ঠাঁই। ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এসে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পান তিনি। কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে লিলি বেগম প্রধানমন্ত্রীকে শোনান তার জীবনের দুঃখগাঁথা।

লিলি বেগম জানান, হঠাৎ অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে তার চোখ নষ্ট হয়ে গেলে তাকে ও তার সন্তানকে ছেড়ে চলে যান স্বামী। পরে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন লিলি। বাবা জায়গা জমি বিক্রি করেও চোখের চিকিৎসা শেষ করতে পারেননি। এক পর্যায়ে হয়ে পড়েন গৃহহীন।
লিলির দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী তার চোখের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। ঢাকার চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে দ্রুততম সময়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেন। এ সময় তার চিকিৎসার সব ব্যবস্থার কথা জানান জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান।

লিলির এ দৃষ্টিহীন জীবনের অসহায়ত্বের গল্প শুনে তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুও। তিনি বলেন, এই আমাদের প্রধানমন্ত্রী, যার চোখ কোনোকিছু এড়ায় না। তার দৃষ্টি সীমানায় কেউ দুর্দশায় থাকবে এটা তিনি কখনোই চান না। তাই তো লিলির এ অবস্থা দেখে তার চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্ব নিলেন। আমরাও লিলির পাশে আছি। এখানে তার যা সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা করব।

অনুষ্ঠানে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ৪র্থ পর্যায়ের ২য় ধাপে পাবনা জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৬৪৬টি ঘর হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে বুধবার (৯ আগস্ট) পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬৮টি ঘর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে সরাসরি যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে পাবনা জেলাকে ‘ক’ শ্রেণীর ভূমিহীন গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য দেন সুবিধাভোগীরা।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ৪র্থ পর্যায়ের ২য় ধাপে এবার পাবনার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চাটমোহরে ৭৮টি, ভাঙ্গুড়ায় ৪১টি, ফরিদপুরে ১১৩টি, সুজানগরে ৫৩টি, বেড়ায় ৩৬১টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছ। ইতিমধ্যে উপকারভোগী বাছাই করে তাদের কবুলিয়াত ও নামজারী সম্পন্ন হয়েছে। সেইসাথে তাদের দখলও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

এর আগে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়ের প্রথমধাপে ৩ হাজার ৯টি ঘর ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে প্রদান করা হয়েছে। ৪র্থ পর্যায়ে জেলায় ১ হাজার ৫১৮টি ঘর বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ১ম ধাপে গত ২২ মার্চ ৮৭২টি ঘর প্রদান করা হয়েছে। এর আগে চারটি উপজেলা ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, সাঁথিয়া ও পাবনা সদর উপজেলাকে ইতিমধ্যে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, রাজশাহী রেঞ্চের ডিআইজি আনিসুর রহমান, পাবনা জেলা প্রশাসক মু: আসাদুজ্জামান, পাবনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী সহ স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..