মঙ্গলবার, ০৬ জুন ২০২৩, ০১:৫৫ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
অফিস অটোমেশন সিষ্টেমের উদ্বোধন, কাগজবিহীন অফিস হতে চলেছে পাবিপ্রবি বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে পাবিপ্রবিতে আলোচনা সভা পাবিপ্রবিতে প্রথমবর্ষের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার সকল আয়োজন সম্পন্ন আন-নাসর রমাদান কুইজ ও কর্জে হাসানা কার্যক্রম শুরু পাবনায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নতুন বর্ষবরণ রূপপুর প্রকল্পের গাড়ি চালক সম্রাট হত্যা মামলার মূলহোতা মমিন গ্রেফতার নিখোঁজের দুইদিন পর রূপপুর প্রকল্পের গাড়িচালকের মরদেহ উদ্ধার বাউয়েট এ, “সরকারী খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রম” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত নিখোঁজের দুইদিন পর যমুনা নদী থেকে কিশোরের বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার চরতারাপুরে বালু মহলে পুলিশের ওপর চেয়ারম্যানের লোকজনের হামলা, সরঞ্জাম জব্দ

পাবিপ্রবিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে-মাসুদ বাহিনীর প্রধান মাসুদ

পাবনামেইল টোয়েন্টিফোর ডেস্ক
  • প্রকাশিত Thursday, 8 December, 2022
Pabnamail24

১৯৭১ সালে মায়েরা সন্তানদের যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন বলেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল। আমাদের মায়েরা মহান ছিলেন। তাদের আত্মত্যাগের কারণেই আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। আজ বুধবার বিকালে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন এ কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর -২ এর ক্র্যাক প্লাটুন মাসুদ বাহিনীর প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আমেরিকা প্রবাসী কমান্ডার আবুল হাসান মাসুদ। তিনি ১৯৭১ সালে ঢাকা শহরে গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন। তাঁর সব ভাইবোন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যালারী-২ আজ বুধবার নেমে এসেছিলে ১৯৭১ সালের গেরিলাযুদ্ধের প্রতিচ্ছবি। মাসুদ বাহিনীর প্রধান মাসুদ ১৯৭১ সালের ঢাকা শহর বিশেষ করে তাঁর বাহিনীর যুদ্ধের স্মৃতি তুলে ধরেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে, তখন পিনপতন নীরবতা, সবার শোনার আগ্রহ বাংলাদেশের গৌরবগাঁথা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা। বিজয়ের মাসে এক মুক্তিযোদ্ধার কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনার আসরের আবহ ছিল অন্যরকম।

আবুল মাসুদ বলেন, ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার পর ঢাকা শহরের তরুনরা আমরা কিছু একটা করার জন্য ছটফট করতে থাকি। মুক্তিকামী তরুণ আমরা অস্থির হয়ে পড়ি দেশের জন্য কিছু করতে হবে। কিন্তু আমাদের কাছে কোন অস্ত্র নাই। তারপর বন্ধুরা মিলে আগড়তলা যাই এপ্রিলের শুরুতে। সেখানে মেলাঘর ক্যাম্পে যোগ দিয়ে তিন সপ্তাহের যুদ্ধকৌশল শিখে দেশে আসি। মুক্তিযুদ্ধের সুপার হিরো এটিএম হায়দারের তত্ত্বাবধায়নে গড়ে ওঠা গেরিলাদের একজন আবুল হাসান মাসুদ হয়ে ওঠি মাসুদ বাহিনীর প্রধান। পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় সেই এলাকা আমার দায়িত্বে পরে। আগষ্ট কিংবা সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে বোমা বিস্ফারণ ঘটাই। মাসুদ বাহিনী ২৪ সেপ্টেম্বর হাবিব ব্যাংকের হাটখোলা শাখায় অপারশেন চালাই। সেখান থেকে সংগৃহিত অর্থ মুক্তিযুদ্ধ সহায়ক ফান্ডে পাঠানো হয়। সেই খবর বিশ্বের বড় বড় সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। দলটি প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যস্ততম মতিঝিল এলাকায় বোমা ফাটায়। আমার কাছে সরাসরি সহায়তা করে আমার বোন শামিমসহ সকল ভাইবোন।
মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে অপারশেন করার আগে সহযোদ্ধা করিম কে নিয়ে গাড়ী ছিনতাইয়ের ঘটনা বলেন মাসুদ। সেই লোহমর্ষক কাহিনীর ঘটনা বিবিসি ,ভয়েস অব আমেরিকা , আকাশবাণীতে প্রচারিত হয়।

তার সহযোদ্ধা ছিলেন হাবিব, শহিদ, শামসু, আজাদ। স্মৃতিচারণের সময় মাসুদ নিজেও নষ্টালজনিক হয়ে ওঠেন। দেশ স্বাধীনের পর এলাকায় বিশৃংখলা দেখা দিলে তাঁর উপর শৃংখলা ফেরানোর দায়িত্ব বর্তায়। পুরান ঢাকার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়ে আমেরিকায় আশ্রয় গ্রহণ করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯œাতক মাসুদ।
আবুল হাসান মাসুদ বলেন, আমাদের যুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। গ্রামের মানুষ বিনা খরচে আমাদের থাকতে দিয়েছেন, খেতে দিয়েছেন। আশ্রয় দিয়েছেন। তাদের অবদান ভোলার নয়। গ্রামের মানুষের সহযোগিতা ছাড়া যুদ্ধ করা সম্ভব হত না।

আবুল হাসান মাসুদের ছোট ভাই আবু মনজুর মোর্শেদ বলেন, ১৯৭১ এর ২৫ মার্চের রাতের অভিজ্ঞতা ভয়াবহ, বংশাল, শাখারী বাজার এলাকায় কেবল রক্ত আর রক্ত, ক্ষত বিক্ষত মৃত মানুষ, আর জ্বলন্ত মানুষকে আমি দেখেছি মাত্র ১৩ বছর বয়সে। সেই বয়সেই মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছে আমার পরিবারের সবাই- আমি নিজেও মুক্তিযোদ্ধাদের হয়ে কাজ করেছি। বড় ভাই মাসুদকে সহযোগিতা করেছি।

সভাপতির ভাষণে বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হাসানের ছোট বোন বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, ১৯৭১ সালের দেশের ক্রান্তিকালে হাজারও তরুণের মত মাসুদও মায়ের কাছে এসে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি চায়। সকল মায়ের মত আমার মাও তাঁকে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দেন এই মহান মায়েদের জন্যই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দিয়েছেন দোয়া করেছেন বাংলার সহজ সরল মায়েরা। মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অবদান অপরিসীম। আজকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের ভ্যালুটাকে(মূল্য) আমাদের শিক্ষার্থীদের বহন করতে হবে , ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের কারণেই বাংলাদেশ পেয়েছি।

প্রসঙ্গত, মাসুদ বাহিনীর ডান হাত হিসেবে কাজ করেছেন হাফিজা খাতুন। তিনি মাসুদ বাহিনীর অন্যতম সদস্য হিসেবে গেরিলাযুদ্ধের পরিকল্পনা, যুদ্ধ পরিচালনা ও সমন্বয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি, তাঁর মা, অন্যান্য ভাইবোনেরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার , ওষুধ রবরাহ, প্রাথমিক চিকিৎসা, বার্তা প্রেরণ, মুক্তিযোদ্ধাদের লুকেিয় রাখা এবং এক জায়াগ থেকে আরেক জায়গায় অস্ত্র বহণের কাজ করতেন। স্বাধীনতা পরবর্তী পুরান ঢাকার কোতয়ালি থানাসহ আশেপাশের এলাকার আইন শৃংঙ্খলা রক্ষার জন্য মেজর হায়দারের নিদের্েেশ কাজ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। বঙ্গবন্ধু পরিষদের আহবায়ক ও ইতিহাস ও বংলাদেশ ষ্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাবিবুল্লাহ সঞ্চালনা করেন।

শেয়ার করুন

বিভাগের আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!