প্রশাসনের অবহেলায় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) লেক থেকে লাখ লাখ টাকার মাছ লুটের ঘটনা ঘটেছে। বিশ^বিদ্যালয় নিরপত্তাকর্মীদের যোগসাজশে বহিরাগত লোকজন গভীর রাতে জাল দিয়ে এবং প্রকাশ্য দিবালোকে বড়শি দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে মাছ চুরি করলেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তবে, বহিরাগত নয় বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাই কিছু মাছ ধরেছে বলে দাবি বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের।
পাবিপ্রবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নুরুল্লাহ জানান, ক্যাম্পাসের লেক সংস্কার করে সেখানে চাষের জন্য প্রতিবছর মাছ ছাড়ে কর্তৃপক্ষ। কয়েকদিন আগে প্রশাসনের ঘনিষ্ট কিছু ছাত্রনেতা প্রথমে বড়শি দিয়ে মাছ মারতে শুরু করেন। এরপর, মাছ চুরিতে যোগদেন কর্মচারী, নিরপত্তা প্রহরী, গাড়ী চালক ও আনসার সদস্যরা। বৃহঃস্পতিবার ভোরে নিরপত্তা প্রহরীদের যোগসাজশে বহিরাগতরা লেকে জাল ফেলে বিপুল পরিমাণ মাছ ধরে নিয়ে গেছে। প্রকাশ্যে এমন কান্ড ঘটলেও তাদের বাধা দেয়াতো দূরের কথা বরং মাছ চুরিতে সহযোগিতা করেছে পাবিপ্রবি প্রশাসন।
বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহিন আলম জানান, কিছুদিন আগে বিশ^বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে লেক সংস্কার করে মাছ ছাড়া হয়। কর্তৃপক্ষ তখন লেকটিকে মাছের অভয়ারণ্য ঘোষণা করে। তবে আজ ঘুম উঠেই দেখি বড় বড় জাল ফেলে মাছ লুটের যে মহোৎসব চলছে। প্রক্টরিয়াল বডি, এস্টেট অফিসার ও নিরপত্তা কর্মকর্তা কেউই তাদের বাধা দেয়নি। পরে, শুনেছি তাদের সহযোগীতায়ই পরিকল্পিত লুটপাট চলছে।
পাবিপ্রবির সহকারী রেজিস্টার এস.এম জহুরুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, এর আগে আমি বিশ^বিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসারের দায়িত্বে ছিলাম। তখন প্রশাসনের একটি সুযোগ সন্ধানী চক্র লেকে মাছ ছাড়ার নামে বিপুল অঙ্কের অর্থ লুট করার চেষ্টা করে। তারা মাঝারি সাইজের রঙিন মাছ ২০০ টাকা করে মাছ ক্রয় করে ছাড়ার পর প্রতিটি মাছ ৯০০ টাকা দাম ধরে ভাউচার অনুমোদন করতে চেষ্টা করে। বিরোধিতা করায় আমাকেই এস্টেটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। পরে প্রায় নয় লক্ষ টাকার মাছ ছাড়া হয়েছে বলে তারা বিল জমা দিয়েছেন বলে শুনেছি।
জহুরুল আরো বলেন, প্রক্টরের নেতৃত্বে চক্রটি সামান্য কিছু মাছ ছেড়ে লক্ষ লক্ষ টাকা বিল তোলা হয়েছে। অর্থ লুটের ঘটনা আড়াল করতেই পরিকল্পিত ভাবে মাছ লুট চলছে। মাছ চুরির নাটক সাজিয়ে তারা নিজেদের দুর্নীতি জায়েজ করতে চাইছে। বিষয়টি তদন্ত ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।
পাবিপ্রবির বর্তমান এস্টেট অফিসার, কাজী আনিসুর রহমান বলেন, আমি ব্যক্তিগত ভ্রমণে জেলার বাইরে এসেছি। তাছাড়া, অল্প কিছুদিন আগে এস্টেটের দায়িত্ব নেয়ায় ঠিক কত টাকার মাছ ছাড়া হয়েছে তাও জানা নেই। এটি প্রক্টরিয়াল বডি দেখভাল করছে। মাছ চুরির বিষয়েও আমার জানা নেই। বিশ^বিদ্যালয় নিরপত্তা কর্মকর্তা হাসিবুর রহমান বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আমাদের নিরাপত্তাকর্মীদের দোষারোপ করা হচ্ছে, মূলত আমাদের কোন লোক মাছ ধরার সাথে জড়িত নন। আমরা সব সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়েজিত থাকি। তবে ,প্রক্টর স্যার বিষয়টি বলতে পারবেন।
পাবিপ্রবির প্রক্টর হাসিবুর রহমানের মুঠোফোনে বারবার ফোন করেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন সহকারী প্রক্টর ফারুক হোসেনও। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা শখ করে মাঝে মাঝে মাছ ধরে। তবে, জাল ফেলে মাছ লুটের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমি গত কয়েকদিন ক্যাম্পাসে না যাওয়ায় বিষয়টি জানি না।
এ বিষয়ে পাবিপ্রবি রেজিষ্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, মাছ ছাড়া এবং নিরাপত্তার বিষয়টি প্রক্টরিয়াল বডি দেখাশোনা করেন। গত দুদিন ক্যম্পাস বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে আমি খোজ নিতে পারিনি। বিশ^বিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীরা দায়িত্বে অবহেলা করছেন কনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
Leave a Reply