ভাতিজির বিতর্কিত নিয়োগ অনুমোদন না দিতে পেরে উত্তেজিত হয়ে রিজেন্ট বোর্ডসভা বাতিল করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রোস্তম আলী। সভা বাতিল হওয়ায় নিয়োগ, আপগ্রেডেশন ও উচ্চশিক্ষার অনুমোদনও অনিশ্চিত হয়ে যায় শতাধিক শিক্ষক কর্মকর্তার। প্রতিবাদে বৃহঃস্পতিবার প্রায় চার ঘন্টা উপাচার্যকে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষক কর্মচারীরা। বিকেলে রিজেন্ট বোর্ড সদস্য শামসুল হক টুকু এমপির মধ্যস্থতায় ২৪ ফেব্রুয়ারী পুনরায় সভার তারিখ ঘোষণা করে পুলিশ ও পাবিপ্রবির নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া প্রহরায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন উপাচার্য। বৃহস্পতিবার পৌনে ৫টার দিকে ক্যাম্পাস ছেড়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে পাবনা ত্যাগ করেন।
এর আগে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগকে কেন্দ্র করে রিজেন্ট বোর্ডের সভা স্থগিত হওয়ার পর প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন উপাচার্য। বিকেল পৌনে পাচটার দিকে রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ও পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর মধ্যস্থতায় তিনি অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হন।
রিজেন্ট বোর্ড সদস্য সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু জানান, বিধি বহির্ভূতভাবে উপাচার্য এম রোস্তম আলী নিজে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হয়ে আপন ভাতিজিকে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দেন। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় রিজেন্ট বোর্ড সদস্যরা নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি তুললে তিনি উত্তেজিত হয়ে সভা বাতিল ঘোষণা করেন।
উপাচার্যের মেয়াদ শেষের ২৫ দিন আগে বৃহস্পতিবারের এই সভায় শতাধিক নিয়োগ, আপগ্রেডেশন, এমফিল-পিএইচডি ডিগ্রির অনুমোদনের কথা থাকলেও সেগুলো আটকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে আগামী ২৪ জানুয়ারি এই সভা আবার অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু নিশ্চিত করেছেন।
ক্যম্পাসে কর্মরত পাবনা সদর থানার এস আই কামরুল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে উপাচার্যের মতবিরোধ হওয়ায় ক্যাম্পাসে একটু ঝামেলা দেখা দেয়। খবর পেয়ে আমরা এখানে এসেছি। পরে শামসুল হক টুকু এমপি স্যারের উপস্থিতিতে বিষয়টি সুরাহা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তারা ফিরে গেলে উপাচার্য ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে চলে গেছেন।
মেয়াদকালের শেষ সময়ে এসে পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রোস্তম আলী ১০২ জনের নিয়োগ চূড়ান্ত করতে রিজেন্ট বোর্ডের ৬০তম সভা আহ্বান করেছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় সভা শুরুর পরই বোর্ড সদস্যরা নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তোলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উপাচার্য সভা স্থগিতের ঘোষণা দেন।
এদিকে উপাচার্যের এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হন আপগ্রেডেশনের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষক-কর্মকর্তারা। সভা স্থগিতের কথা জানাজানি হলে বেলা ১২টার দিকে তাঁরা উপাচার্যকে নিজ কক্ষে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০তম রিজেন্ট বোর্ডের সভা বাতিল করে চলে যেতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রোস্তম আলীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষক–কর্মকর্তারা।
রিজেন্ট বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে রিজেন্ট বোর্ডের ৬০তম সভা শুরু হয়। শুরুতেই বোর্ডের সদস্যরা নিয়োগে আপত্তি তোলেন। একই সঙ্গে উপাচার্যের ভাতিজিকে চাকরি ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ তোলেন। সদস্যরা নিয়োগ স্থগিত রেখে অন্য অ্যাজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করতে উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানালে উপাচার্য ক্ষিপ্ত হন। নিয়োগ না হলে রিজেন্ট বোর্ড স্থগিতের ঘোষণা দেন। মাত্র ৩০ মিনিট আলোচনার পরই রিজেন্ট বোর্ড সদস্যরা সভাস্থল ত্যাগ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. আব্দুল আলিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অনিয়ম, অস্বচ্ছতা ও যোগসাজশ করে প্রায় চূড়ান্ত করা ১০২ জনের গণনিয়োগ দেওয়ার পায়তারা করে আসছিলেন ভিসি স্যার।
উপাচার্যের মেয়াদ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। তিনি মেয়াদকালের শেষ পর্যায়ে নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি করে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করে যাচ্ছেন। নিজের খেয়াল-খুশি মতো ইচ্ছে মাফিক অনিয়ম ও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অযোগ্য, অদক্ষ্য জনবল নিয়োগ, স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করছেন। রিজেন্ট বোর্ডের সভায় সভা শেষে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগের তদন্ত ও বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে উদ্ধারের সাথে গণনিয়োগ বন্ধসহ তার অনিয়ম, দূর্নীতি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থার দাবী জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, আগামী ৬ মার্চ উপাচার্যের দায়িত্বকালের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। এর আগে তিনি এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। রিজেন্ট বোর্ডের এই ৬০তম সভায় ৬১টি আলোচ্য সূচির মধ্যে ৪২টি ছিল নিয়োগের অনুমোদন সংক্রান্ত। এসব নিয়োগের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে-কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। স্বজনপ্রীতি করে উপাচার্য এম রোস্তম আলী তাঁর ভাতিজি কানিজ ফাতেমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার পদে চাকরি দিয়েছেন। এমনকি নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার আগেই তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
পাবিপ্রবি উপাচার্য এম. রোস্তম আলী এর আগেও একাধিকবার দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও অনিয়মের কারণে বিতর্কিত হয়েছেন। ইউজিসির তদন্তে অনিয়মের প্রমাণও মিলেছে। অনিয়ম নিয়ে তদন্ত চলছে দুদকেও।
বিষয়টি নিয়ে পাবিপ্রবি উপাচার্য এম. রোস্তম আলীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি বলেন, সব নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। সব কথা ২৪ ফেব্রুয়ারী হবে বলে মুখ ঘুরিয়ে দ্রুত চলে যায় ভিসি।
Leave a Reply