বাংলাদেশ জানে, আপনি বঙ্গবন্ধুর পরম স্নেহের হাসু। বঙ্গবন্ধুবিহীন এই বাংলাদেশকে কেউই আপনার চাইতে বেশি ভালোবাসে না।
আমাদের কাছে আপনি মমতাময়ী মা, কারো কাছে আপনি প্রিয় আপা, আবার এই বাংলারই কারো কাছে আপনি শেখের বেটি। বাংলাদেশের কাছে আপনি পিতা মুজিবের রক্ত আর আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকারী।
সাহিত্যের পাতায় অগণিত পাঠকের কাছে আপনি রবি ঠাকুরের লেখনীর কল্পনার,
“অন্ধকারে সিন্ধু তীরে আকাশ পানে চেয়ে আলোর নৌকা ভাসিয়ে দেওয়া একলাটি ওই মেয়ে”
আপনি বিশ্বজয়ের সেই স্বপ্নসারথি, যিনি বাঙালির স্বপ্নগুলোকে পৌঁছে দিয়েছেন সর্বোচ্চ শিখরে, আবার আপনি সেই আপোষহীন নেত্রী যিনি বাঙালির আজন্মের কলঙ্ক মোচন আর পাপমুক্তি নিশ্চিত করেছেন একক দৃঢ়তায়।
আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি টুঙ্গিপাড়ায় বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি ঢাকায় পরিবারের সাথে মোগলটুলির রজনীবোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পরে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে ওঠেন। ১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৭ সালে গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমানে বদরুননেসা সরকারি মহিলা কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। বিয়ের কারণে স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনে ছেদ পড়ায় তাকে অনার্স পাঠ স্থগিত রাখতে হয়। পরে ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
খুব ছোটবেলা থেকেই রাজনৈতিক আবহে বেড়ে ওঠা শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের নামের এই ভূখণ্ডের জন্ম দেখেছেন খুব কাছে থেকে কারণে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়িটি ছিল আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগের অঘোষিত রাজনৈতিক কার্যালয়, যেটি পরবর্তীতে বাঙালির তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। একটি জাতির রাষ্ট্রের সাথে একটি বাড়ি, একটি পরিবার কিভাবে ওতপ্রতভাবে জড়িত থাকতে পারে বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু পরিবার এবং বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়িটি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
বঙ্গবন্ধু তার মাত্র ৫৫ বছরের জীবনে দীর্ঘ ১৩টি বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। সুদীর্ঘ সময় কারাগারে থাকার কারণে বঙ্গবন্ধুর পরিবার বিশেষ করে তার সন্তানেরা পিতার আদর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যে বয়সে পিতার হাত ধরে স্কুলে যাবার কথা, সেই বয়সে শেখ হাসিনা মায়ের হাত ধরে পিতাকে দেখতে কারাগারে গিয়েছেন। ইতিহাস হয়তো সেভাবেই বিকশিত করছিল তাকে। স্কুলজীবনেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ১৯৬২ সালের দুর্বার ছাত্র অন্দোলন ও স্বায়ত্তশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবির সমর্থনে দেশব্যাপী গণঅন্দোলনের সময় ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সে সময় আন্দোলনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি ইডেন কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা মহাবিদ্যালয়) ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সহ-সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে জনপ্রিয়তা প্রমাণ করেন। ১৯৬৯ সালের আইয়ুববিরোধী গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ৬৯ সালের রাজপথের মিছিলে তাকে খুবই সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ও রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক হন।
১৯৭৫ সালে পৃথিবীর ইতিহাসে নিষ্ঠুরতম জঘন্য হত্যাকাণ্ডে পিতা মাতা ভাই পরিবার-পরিজন সব হারিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা ছয় বছর বিদেশে নির্বাসিত জীবন পার করেন। পিতা মুজিব হত্যাকাণ্ডের পরে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি তথা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘর ছাড়া বাড়ি ছাড়া। জিয়া-এরশাদ শাসনামলে হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কারাগারে বন্দী, মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনের নিশ্চয়তা নেই। দেশে প্রতিদিন রাত থেকে ভোর অবদি কারফিউ চলে। গণতন্ত্র কিংবা বাকস্বাধীনতার ন্যূনতম কোন সুযোগ নেই এই যখন পরিস্থিতি, ঠিক সেই মুহূর্তে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের তথা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের রাজনীতির এক জটিল, কুটিল ও ভয়ঙ্কর ত্রাসমূলক ফ্যাসিস্ট সামরিকতন্ত্র ও তাদের আজীবন সঙ্গী ধর্মব্যবসায়ী, মিথ্যাচারী ও সুবিধাবাদী রাজনীতির আর্বতের মধ্যে গণতন্ত্র, সুশাসন, ভোট ও ভাতের অধিকারের ঝান্ডা হাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আবির্ভূত হন তিনি।
১৭ মে ১৯৮১, পিতা মুজিব বিহীন স্বদেশে প্রবর্তন করে সেদিন উপস্থিত জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু তনয়া জনতার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন,
“আমি সব হারিয়ে আজ আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি, শুধু আমার পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য। প্রয়োজনে আমার পিতার মতো জীবন দেব, তবুও আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে আপস করবো না।”
সেদিন শেখ হাসিনার দুচোখে বেদনার অশ্রু ছিল, কিন্তু বাঙালির দুচোখে শুধু বেদনার অশ্রু ছিল না, বাঙালির এক চোখে ছিল বেদনার অশ্রু, আরেক চোখে ছিল আনন্দ অশ্রু। কারণ পিতা মুজিবকে হারিয়ে ঠিক ছয় বছর পরে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরী এই অধিকারহারা বাঙালির দিন বদলের সংগ্রামের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
সেদিন থেকে গণতন্ত্র আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে ক্লান্তিহীনভাবে তিনি বাংলার মানুষকে সাথে নিয়ে অকুতোভয়চিত্তে সংগ্রামে নেমেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে আসেন। দীর্ঘ ৪১ বছরে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য অবিকল্প সারথি হিসেবে লড়াই করে আসছে। সে লড়াইয়ের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।
আমরা যারা হাসিনা আ ডটার’স টেল যারা দেখেছি তারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছি বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার সেই সংলাপের কথা– ‘মাকে যদি বলতে পারতাম, তোমার হাসু আর আলসে ঘরের মেয়ে নেই। যে মেয়েটা নাকি গল্পের বই পড়ে, গান শুনে দিন কাটিয়ে দিতে চেয়েছিল, সেই মেয়েটিই এখন বাঙ্গালি জাতির পরিত্রাণ কর্তা, বাঙ্গালি জাতির বিকল্পহীন অবলম্বন।’
সমকালীন বিশ্বে দেশরত্ন শেখ হাসিনা এমন এক রাষ্ট্রনায়ক যিনি কেবল বাংলাদেশের চতুর্থ দফা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বেই নিয়োজিত নন, তিনিই একমাত্র রাজনীতিবিদ যিনি টানা ৪১ বছর ধরে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তার নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কর্তব্য সম্পাদন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন রূপায়নে বাঙালি জাতির ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল নতুন অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি তিনি তার একক দৃঢ়তায় বাঙালির আজন্মের কলঙ্ক মোচন করেছেন, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরাশক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বাঙালির কাছে এক লৌহমানবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাতির পিতার রক্তে রঞ্জিত পিচ্ছিল ও বন্ধুর পথ ধরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। পিতার মতো শেখ হাসিনাও মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রামের পথ বেছে নেন।
শেখ হাসিনা নিপীড়িত মানুষের ভালবাসা পেয়েছেন। ময়মনসিংহ গফরগাঁওয়ের সেই রিকশাচালক হাসমত আলীর কথা, যিনি শেখ হাসিনার জন্য জমি কিনে রেখে যান। মৃত্যুর আগে হাসমত আলী তার স্ত্রী রমিজা খাতুনকে শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন। ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল সকালে ‘কালের কণ্ঠে’র সাংবাদিক হায়দার আলীকে জড়িয়ে ধরে রমিজা খাতুন কাঁদলেন। বললেন, ‘মরার আগে কাদিরের বাপ (হাসমত আলী) জমির দলিলডা হাতে দিয়া আমারে কইছিল, আমি মইরা গেলে আমার এতিম মাইডার কাছে (শেখ হাসিনা) জমির দলিলটা পৌঁছাইয়া দিবি। অহন দলিলডা তার হাতে দিয়া যাইতে পারলে আমি মইরাও শান্তি পামু।’
শেখ হাসিনাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে নতজানু করার জন্য আমেরিকা তার বিশ্বব্যাংক ও মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোর সাহায্য তার সরকারের ওপর কম চাপ প্রয়োগ করেনি। শেখ হাসিনা সেই চাপের মুখে নতশির হননি। পদ্মা সেতুর জন্য প্রতিশ্রুত অর্থ সাহায্য যখন বিশ্বব্যাংক প্রত্যাহার করে, তখন সবাই ভেবেছিলেন হাসিনা ভেঙে পড়বেন। তিনি ভাঙেননি। তিনি সেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের সক্ষমতার জানান দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন দাবায় রাখতে পারবে না পিতার পথ ধরে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন অদম্য বাঙালিকে কখনোই দাঁড়িয়ে রাখা যায় না। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা একজন ভিশনারি লিডার হিসেবে মাত্র কয়েক বছরে বাংলাদেশকে আমূল পরিবর্তন করেছেন।
সর্বত্র ডিজিটালাইজেশন এর মধ্য দিয়ে পাহাড় কিংবা সমতল, হাওর কিংবা বিল, গ্রাম অথবা শহর সবকিছুকে একীভূত করেছেন। জনগণের প্রান্তিক পর্যায়ে সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন জীবন-মানকে করেছেন সহজতর।
মাত্র দুই যুগ আগে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল যেমন অবিশ্বাস্য ছিল, তেমনিভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে উল্লেখিত ক্ষুদ্র বর্ণনাটি হয়তো এখন অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, দূরদর্শিতা, দেশপ্রেম এবং নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল নেতৃত্বের ফলশ্রুতিতে রূপকল্প ২০৪১ আমাদের নিয়ে যাবে উন্নয়নের সেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায়।
পারিবারিক ট্র্যাজেডির কারণে বিশ্বের যে পরিবারগুলোকে রাজনীতিতে “”One Without Equal” বলা হয় তার শীর্ষে অবস্থানকারী নেতৃত্বের নাম শেখ হাসিনা তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। পরিবারের প্রায় সকলকে হারিয়ে তিনি বাংলার জনগণকে আপন করে নিয়েছেন। স্বাধীনতা বিরোধী এবং জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল, তাদের এবং তাদের উত্তরসূরীদের সাথে তিনি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে তাকে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচারে বিচারকের বিব্রতবোধ। তিনি নীলকোন্ঠী, অভিমান, অশ্রু, রাগ, বিরাগ গোপন করে তিনি শুধু এগিয়ে গেছেন আপন লক্ষ্যে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে নৈতিকভাবে অপরাধী হয়ে থাকার কলঙ্ক থেকে মুক্তি দিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিক সকল ষড়যন্ত্র ও চাপ উপেক্ষা করে অসাধারণ সহনশীলতার সাথে জাতির পিতার হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন।
কিছুকাল আগেও দরিদ্র বাংলাদেশের বাজেট ছিল সম্পূর্ণভাবে বিদেশী অনুদান ও সাহায্যের উপর নির্ভরশীল এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতে সীমিত। শেখ হাসিনা দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ২০০৮-এর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে “রূপকল্প ২০২১” ঘোষণা করেন এবং এই লক্ষ্য যখন কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে এগিয়ে তখন ঘোষণা করেন “রূপকল্প ২০৪১”। তাঁর এই দূরদর্শিতায় অনুপ্রাণিত হয়েছে ভারত (ডিজিটাল ইন্ডিয়া) ও সৌদি আরব (ভিশন ২০৩০) এবং এটি আজ বিশ্বের কাছে মডেল।
শেখ হাসিনা রচিত একটি গ্রন্থের নাম “ওরা টোকাই কেন?” তিনি তার রচনা ভাবনাতেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করেছেন।
মানবিক গুণাবলী আলোকিত করেছে এই অসাধারণ মানবীকে। তাই অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হওয়া এতিম আসমা, রুনা ও রত্নাদের গণভবনে বিয়ে সম্পন্নের দায়িত্ব নেন, কবি হেলাল হাফিজ, নির্মলেন্দু গুণ বা মুক্তিযুদ্ধের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদের চিকিৎসার ভার নেন, বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামনি, পাবনার চাটমোহরের জোড়া মাথার শিশু কিংবা অগণিত মানুষের কথা জানা মাত্র চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করেন। শিশু শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের চিঠির জবাব দেয়া, কিংবা সাত-সকালে টিভিতে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে ফোন করা – এ যেন স্বপ্নের মতো! জনগণের সমস্যার কথা জানা মাত্র ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন, কখনো নিরাপত্তা উপেক্ষা করে জনতার কাছে চলে যাচ্ছেন, শত ব্যস্ততার মধ্যেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরাদের খোঁজ খবর রাখছেন, জেলা নয় উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তিনি নিজে ব্যাক্তিগতভাবে চিনেন, জানেন এবং খোঁজখবর রাখেন, বিদেশ সফরকালে অন্যান্য যাত্রীদের হতবাক করে তাদের সাথে মিশে যাচ্ছেন, পরম মমতা নিয়ে খাবার তুলে দিচ্ছেন এতিম কোনো শিশুর মুখে, আবার সংক্ষিপ্ত সফরে পিতৃভূমি টুংগীপাড়া গিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন নিজে হাতে করছেন শেখের বেটি হিসেবে অথবা বাড়ির বড় কন্যা হিসেবে। পা ভেজাচ্ছেন সমুদ্রের নোনা জলে! এ তো আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়!
মালয়েশিয়ার উন্নয়নের রূপকার বলা হয় মাহাথির মোহাম্মদকে যিনি প্রতিপক্ষের তেমন কোনো বাঁধা ছাড়া দীর্ঘসময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ৭৫-এ পরিবার হারিয়েছেন, ২০০৪ এর ২১ আগস্ট ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও সহযোদ্ধাদের রক্ত দেখেছেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে ২১ বার হামলা করা হয়েছে তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে। সব হারিয়ে প্রতি পদক্ষেপে ষড়যন্ত্র, বিরোধিতা ও ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে শেখ হাসিনা স্বল্প সময়ে বাংলাদেশকে বিশ্বে যে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। দেশের মানুষের ভাগ্যন্নোয়নে নিবেদিত শেখ হাসিনা পিতা মুজিবের মতোই মিশে আছেন দেশ ও জনতার সাথে।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেখিয়ে দেয়া, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন আর সামাজিক নিরপত্তা বেস্টনীর আওতায় গৃহীত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকল্পের মাধ্যমে তৃণমূল মানুষগুলোর জন্য ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনা যে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, আমরা বর্তমান প্রজন্ম তার এই সংগ্রামের সারথি হতে চাই।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের রাজনৈতিক মুক্তি দিয়ে গেছেন। আমাদের অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তি নিশ্চিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক টানপোড়েনের মধ্যেও তিনি শক্ত হাতে হাল ধরেছেন। আমরা তরুণ প্রজন্ম বিশ্বাস করি শেখ হাসিনার মতো এদেশটাকে আর কেউই ভালবাসে না আর তিনিই বাঙালির বিকল্পহীন অবলম্বন। অন্ধকারের প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে আলোর অভিযাত্রায় তিনি আমাদের বিকল্পহীন সারথি।
আজকের এই শুভক্ষণে আমাদের প্রার্থনা সুস্থ শরীরে দীর্ঘায়ু হোন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
লেখক, শিক্ষার্থী, আইন ও মানবাধিকার বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক।
Leave a Reply