অনাবৃষ্টির কারণে চলতি মৌসুমে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় ২৭০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করতে পারেননি কৃষকরা। কেবল বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে উপজেলার যেসব জমিতে প্রতিবছর আমনের আবাদ হতো সেসব জমি এবার অনাবাদি রয়ে গেছে। পাশাপাশি সারের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ও শ্রমিকের মজুরি চাষিদের সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে।
উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের আড়কান্দি, পতিরাজপুর, দুবলাচারা ও আড়পাড়া, দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মারমী, সুলতানপুর গ্রামে সরেজমিন ঘুরে শত শত বিঘা অনাবাদি জমি দেখা যায়। চাষিরা জানান, এসব জমিতে প্রতিবছর ধানের আবাদ করা হতো। এবার অনাবৃষ্টির কারণে আবাদ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমি। ২৭০ হেক্টর জমি অনাবাদি রয়েছে।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বর্ষা মৌসুমের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৬১ দশমিক ৬ মিলিমিটার। অথচ ২০২০ সালের একই সময়ে বৃষ্টিপাত হয় ৮৩৩ দশমিক ১ মিলিমিটার। এছাড়া ২০২১ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয় ১০৩১ দশমিক ৬ মিলিমিটার।
পতিরাজপুর গ্রামের কৃষক কবির মালিথ বলেন, প্রতিবছর আমি ২২ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করি। এবার মাত্র তিন বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছি। প্রায় ১৯ বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে আছে। অনাবৃষ্টির কারণে ধান রোপণ করা সম্ভব হয়নি। জমি অনাবাদি থাকায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
মুলাডুলি ইউনিয়নের আড়কান্দি গ্রামের বালি কুকড়া বিলে প্রতিবছরই ২৩ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেন রবিউল মালিথা। এবার অনাবৃষ্টির কারণে আট বিঘা জমিতে ধান রোপণ করতে পারেননি তিনি।
রবিউল বলেন, আমন মৌসুমে এই জমিগুলো বৃষ্টির পানিতে ভরপুর থাকে। সেচের কোনোদিন প্রয়োজন হয়নি। এবারই প্রথম অনাবৃষ্টির কারণে ধান রোপণ করা গেলো না। বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করা সম্ভব না। কারণ ডিজেলের যে দাম মেশিনের পানি দিয়ে ধানের আবাদ করতে গেলে ব্যাপক লোকসান হবে। আমার মতো বহু কৃষকের জমি এবার অনাবাদি পড়ে আছে।
আড়কান্দি বড়বিল এলাকার চাষি সান্টু মোল্লা বলেন, কৃষকের সবদিকে বিপদ। বৃষ্টি নেই, সার-ডিজেলের দামও বেশি। আমার অন্যান্য সব জমিতে সবজি আবাদ হয়। দুই বিঘা জমিতে প্রতিবছর ধানের আবাদ করি। নিজেদের পরিবারের সদস্যদের খাবারের জন্য। এবার তো বৃষ্টির অভাবে ধান লাগাতে পারলাম না। সারাবছর চাল কিনে খেতে হবে। কী যে কষ্ট হবে তা মনে হলে এখন শিউরে উঠছি। এমন তো কোনোদিন হয় না।
মুলাডুলি ইউনিয়নের উপ-কৃষি কর্মকর্তা আলিউজ্জামান জিয়া বলেন, বৃষ্টির অভাবে বিলের বেশকিছু উঁচু জমিতে এবার ধান রোপণ করতে পারেনি কৃষকরা। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেচ দিয়ে ধান রোপণ করে কৃষকরা লাভবান হতে পারবে না দেখে জমিগুলো অনাবাদি রেখেছে। সম্প্রতি কিছু বৃষ্টিপাত হওয়ায় এখনো ধান রোপণ চলছে।
নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেড় মাস পরে ধান রোপণ করে ভালো ফলন পাওয়া যাবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সার দিয়ে এসব ধানের চারা দ্রুত বৃদ্ধি করতে হবে। তবেই ফলন ভালো হতে পারে। এ এলাকায় প্রায় দেড় থেকে দুইশো বিঘা জমিতে এবার ধানের আবাদ হয়নি। এখানকার মতো অন্য ইউনিয়নেও একই অবস্থা। এবছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, এ উপজেলায় কম বৃষ্টিপাতের কারণে ২৭০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা আমন ধানের আবাদ করতে পারেনি। এসব জমিতে ধান লাগাতে না পারলেও অনেক কৃষক মাসকলাই আবাদ করেছেন। এতে তারা কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিতে নিতে পারবে।
এ উপজেলায় আমনের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সামান্য কিছু ঘাটতি থাকতে পারে। কিন্তু পাবনা জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আমন আবাদ হয়েছে।
Leave a Reply