সাতদিনের ব্যবধানে পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত পাঁচ রুশ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে রাশিয়ানদের ক্রমাগত মৃত্যুর ঘটনায় নানান প্রশ্নের উদ্রেক ঘটেছে মানুষের মাঝে। গত রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) ভোরোটনিকভ আলেকজান্দ্রা (৫৫) নামে এক রুশ নাগরিকের মৃত্যু হয়।তিনি প্রকল্পের ‘নিকিমথ’ নামের একটি রুশ সাব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কমর্রত ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছিলো ভোরোটনিকভ আলেকজান্দ্রা প্রকল্পের ‘গ্রিনসিটি’ আবাসিক এলাকায় একটি কক্ষে থাকতেন। রবিবার দুপুরের দিকে তাকে তার ফ্ল্যাটে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন এক সহকর্মী। পরে গ্রিনসিটি ও রূপপুর প্রকল্পসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পরবর্তীতে এ সম্পর্কে গ্রিনসিটি ও রূপপুর প্রকল্পের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
এর আগে গত শুক্রবার(২ ফেব্রুয়ারী) রাতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের টেস্ট রোসেম নামে রুশ সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রুশ নাগরিক চুকিন পাভেল (৪৮) অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাকে গ্রিনসিটি আবাসিক থেকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে একই দিন রাত ২টার দিকে তলমাসেফ ভাইয়াসেলভের (৫৯) নামের আরেক রুশ নাগরিকের মৃত্যু হয়। । তিনি ১৪ তলার সিঁড়ি থেকে পড়ে অজ্ঞান হন। পরে কোম্পানির নিজস্ব ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়াও গত ২ ফেব্রুয়ারি শাকিরভ আলেক্সেই ঘুমের মধ্যে এবং ২৮ জানুয়ারি ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় বারচেনকো আলেক্সেইয়ের। তারা দুজনই এই প্রকল্পের কর্মী ছিলেন। রূপপুর প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট ও কর্মরত একাধিক জনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, গত একবছরে রাশিয়ান শ্রমিকদের অধিকাংশই মারা গেছেন ঘুমের মধ্যে অচেতন অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে এদের অধিকাংশই মারা যাওয়ার দিনে মদ পান করেছেন। রূপপুর প্রকল্পের বিদেশী নাগরিকদের টার্গেট করে পাকশী, জয়নগর ও ঈশ্বরদী এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশকিছু মদের দোকান। এদের মধ্যে অধিকাংশই অনুমোদনহীন। এছাড়া প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় একটি চক্র বিদেশীদের কাছে গোপনে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভেজাল মদও সরবরাহ করে। এসব মদ পানেই বিষক্রিয়া ও হৃদরোগে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে।
এ বিষয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য কল করা হলেও তা রিসিভ হয়নি।পুলিশ জানায়, ভোরোটনিকভ আলেকজান্দ্রা প্রকল্পের ‘গ্রিনসিটি’ আবাসিক এলাকায় একটি কক্ষে থাকতেন। রবিবার দুপুরের দিকে তাকে তার ফ্ল্যাটে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন এক সহকর্মী। পরে গ্রিনসিটি ও রূপপুর প্রকল্পসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ সম্পর্কে গ্রিনসিটি ও রূপপুর প্রকল্পের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
কয়েকদিনে বিদেশি নাগরিকদের মৃত্যুর কারণ খুঁজতে কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, “অল্প সময়ে কয়েকজনের মৃত্যু হওয়ায় তাদের মৃত্যুর কারণ খুঁজে দেখা হচ্ছে। এই প্রকল্পে বিদেশি নাগরিক যারাই মারা যান তাদের প্রত্যেকের লাশের ময়নাতদন্ত হয়। এই ৫ জনেরও হয়েছে। তাদের শরীর থেকে নেয়া নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষাও হবে। ইতিমধ্যে ২ জনের নমুনা রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে।” ওসি জানান, বিদেশি নাগরিকদের মৃত্যুর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তদন্ত কমিটি হয়নি। রুটিন কাজের অংশ হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে।
ওদিকে রূপপুর প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, “বিদেশি নাগরিকদের ভালো রাখার জন্য আমরা সবই করেছি। কিন্তু যা ঘটেছে তা অপ্রত্যাশিত। সেখানে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে বিদেশি প্রতিষ্ঠান। মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার কোনো তদন্ত কমিটি করবে না।”
রূপপুর প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, “প্রকল্প এলাকায় ৪ হাজার ৮০০ বিদেশি নাগরিক বসবাস করেন। সেখানে অনেকে পরিবার নিয়ে থাকেন। তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে সেনাবাহিনী। বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তার কোনো সমস্যা নেই।”
Leave a Reply