একদিনের ব্যবধানে আবারও পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত এক রুশ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নাম ভোরোটনিকভ আলেকজান্দ্রা (৫৫)। প্রকল্পের ‘নিকিমথ’ নামের একটি রুশ সাব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কমর্রত ছিলেন। রবিবার দুপুরে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে, গত ৮ দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এবং সিঁড়ি থেকে পড়ে পাঁচ রুশ নাগরিকের মৃত্যু হলো।
পুলিশ জানায়, ভোরোটনিকভ আলেকজান্দ্রা প্রকল্পের ‘গ্রিনসিটি’ আবাসিক এলাকায় একটি কক্ষে থাকতেন। রবিবার দুপুরের দিকে তাকে তার ফ্ল্যাটে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন এক সহকর্মী। পরে গ্রিনসিটি ও রূপপুর প্রকল্পসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ সম্পর্কে গ্রিনসিটি ও রূপপুর প্রকল্পের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
তবে ,ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ভোরোটনিকভ আলেকজান্দ্রার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ আরও জানায়, গত শুক্রবার রাতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের টেস্ট রোসেম নামে রুশ সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রুশ নাগরিক চুকিন পাভেল (৪৮) অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাকে গ্রিনসিটি আবাসিক থেকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে একই দিন রাত ২টার দিকে তলমাসেফ ভাইয়াসেলভের (৫৯) নামের আরেক রুশ নাগরিকের মৃত্যু হয়। তিনি ১২ নম্বর আবাসিক ভবনের ১৩ তলার ১৩১ নম্বর ফ্ল্যাটে থাকতেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের এসএমইউ-১ নামে আরেকটি সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ইনস্টলার হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তিনি ১৪ তলার সিঁড়ি থেকে পড়ে অজ্ঞান হন। পরে কোম্পানির নিজস্ব ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তার আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি শাকিরভ আলেক্সেই ঘুমের মধ্যে এবং ২৮ জানুয়ারি ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় বারচেনকো আলেক্সেইয়ের। তারা দুজনই এই প্রকল্পের কর্মী ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রূপপুর প্রকল্পের একটি সূত্র জানায়, গত একবছরে রাশিয়ান শ্রমিকদের অধিকাংশই মারা গেছেন ঘুমের মধ্যে অচেতন অবস্থায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে এদের অধিকাংশই মারা যাওয়ার দিনে মদ পান করেছেন। রূপপুর প্রকল্পের বিদেশী নাগরিকদের টার্গেট করে পাকশী, জয়নগর ও ঈশ^রদী এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশকিছু মদের দোকান। এদের মধ্যে অধিকাংশই অনুমোদনহীন।
এছাড়া প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় একটি চক্র বিদেশীদের কাছে গোপনে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভেজাল মদও সরবরাহ করে। এসব মদ পানেই বিষক্রিয়া ও হৃদরোগে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে।
এ বিষয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর এবং সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য কলা করা হলেও তা রিসিভ হয়নি।
Leave a Reply