রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন

আটকের ১২ ঘন্টার পর সুজানগরের চেয়ারম্যান শাহীন মুক্ত

নিজস্ব প্রতিনিধি, পাবনামেইল টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪

নানা নাটকীয়তার পর মঙ্গলবার বেলা ১২ টার দিকে ছাড়া পেলেন পাবনার সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামান শাহিনসহ ১১ জন। সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে প্রায় ২৩ লাখ টাকাসহ আটক হওয়া সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীনের সাথে থাকা অর্থ নির্বাচনী ব্যয়সীমার মধ্যে হওয়ায় তাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সোমবার মধ্যরাতে সুজানগরের চর ভবানীপুরের কালীপাড়া থেকে তাকেসহ ১০ সহযোগীকে আটক করেন র‌্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পের সদস্যরা। মঙ্গলবার দুপুরে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ছেড়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে র‌্যাব জানিয়েছে, চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেননি।

তবে গতরাতে আটকের পর সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব কমান্ডার এহতেশামুল হক খান জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহিনুজ্জামান ভোটারদার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিতে টাকা ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় শাহিনের কাছ থেকে ব্যাগভর্তি ২২ লাখ ৮২ হাজার ৭শ টাকা জব্দ করে র‌্যাব।

শাহীনুজ্জামান শাহীন সুজানগর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এবারের উপজেলা নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী। তার নির্বাচনী প্রতীক আনারস। বুধবার (৮ মে) প্রথম ধাপে এই উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আটকের ১২ ঘন্টার মাথায় মঙ্গলবার (৭ মে) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে র‌্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্প থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে র‌্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোঃ এহতেশামুল হক খান জানান, আটকের পর আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। যেই টাকা জব্দ করা হয়েছিল সেটি নির্বাচনী ব্যয়ের সীমার মধ্যেই ছিল। জব্দকৃত টাকা ট্রেজারিতে জমা দেওয়া হবে এবং শাহিনসহ সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি আরও তদন্ত করে পরবর্তীতে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মুক্তি পাওয়ার পর শাহিনুজ্জামান শাহীন বলেন, আমরা নির্বাচনী সকল ব্যয় পরিশোধের জন্য টাকাগুলো আনা হচ্ছিল। এটা কোনো অসৎ উপায়ের জন্য ব্যবহার হচ্ছিল না। সম্পূর্ণ বৈধ টাকা। আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার বিজয় ঠেকাতে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা শুরু থেকেই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। আজকের ঘটনার তারই বহিঃ প্রকাশ। সকালে টাকার উৎস ও ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়ার পর নির্বাচনী আইন পর্যালোচনা করে তা আইনসম্মত হওয়ায় তারা বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। এটা আসলে নিছক ভুল বোঝাবুঝি।

শাহীন আরো বলেন, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে আমার প্রতিপক্ষরা এই ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত । তারা এ ঘটনাকে নানা রঙ দিয়ে সাধারন ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। তবে, আমি আমার দলের নেতাকর্মী ও সুজানগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা এই মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। আমি নিশ্চিত ভোটের মাধ্যমেই তারা এর জবাব দেবে।

এদিকে শাহিনুজ্জামান শাহীনসহ আটক ১১ জনের মুক্তির দাবিতে ঘটনার পর পরই সুজানগর থানা, উপজেলা পরিষদ ও সুজানগর বাজার ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। মঙ্গলবার (৭ মে) ভোর রাত থেকে মুক্তি দেয়ার আগমুহূর্তে পর্যন্ত নেতাকর্মীরা সুজানগর থানার সামনে সুজানগর বাজারের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। মুক্তির খবর সেখানে পৌছালে আনন্দে মেতে উঠেন নেতাকর্মীরা।

শাহিনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার টুম্পা বলেন, আমার স্বামী যেহেতেু ব্যাবসায়ী, বিভিন্নজনের কাছ থেকে পাওনা টাকা নিয়ে তিনি বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় র‌্যাবের দল তার গাড়ির থামিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক তাকে আটক করে।
আমার স্বামী চেয়ারম্যানের পাশাপাশি একজন ব্যবসায়ী, ফলে তার কাছে এত টাকা থাকতেই পারে। আমার স্বামী যদি ভোটারদের মাঝে টাকা বিলি করা অবস্থায় ধরা পড়ত তাহলে একটা কথা ছিল, কিন্তু সেরকম তো কিছু হয়নি। প্রতিপক্ষকে বিশেষ সুবিধা দিতে এটা করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়। তারপরও যেহেতু ছাড়া পেয়েছে এখন কারো প্রতি আমার অভিযোগ নেই। তবে এই হয়রানীর প্রতিশোধ ভোটাররা ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে জবাব দেবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, রাত আড়াইটার পর থেকে আমি সুজানগওে অবস্থান করছিলাম, পরিবেশ শান্ত রাখার চেষ্টা করেছি। বিক্ষুব্ধদের আমরা শান্ত রাখার চেষ্টা করেছি, পরে দুপুর আড়াইটার সময় সুজানগর বাজার থেকে লোকজনকে সরিয়ে দিয়েছি।

উল্লেখ্য, আগামী ৮ মে পাবনার সুজানগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আনারস প্রতীকের শাহীনুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..