পাবনার সুজানগরের সুলতান গেট এলাকায় একটি হাফিজিয়া মাদরাসার সামনে দোকান করাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৮ জন আহতসহ ৫টি বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সন্ত্রাসীরা ওই এলাকার রশিদ মোল্লার ৩টি দোকান, জাফর মোল্লার বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে।
সুলতান গেট এলাকাবাসী জানান, এলাকার লোকজন একত্রিত হয়ে সাগরকান্দি এতিমখানা ও মাদরানা চালু করেন প্রায় বিশ বছর পূর্বে। ভালো ভাবেই চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী ওই মাদরাসার সভাপতি লোকমান হোসেন মাষ্টার নিজ ভায়রার ছেলে আবু তালহা সুজনকে মুহতামিম (প্রধান) হিসেবে নিয়োগ দেন।
যে আবু তালহা সুজন জেনারেল লাইনে পড়–য়া এবং এক সময় গাড়ি চালক ছিলেন। হঠাৎ করে সেখানে নিয়োগ পাওয়ার আগে তার বেশ ভূষা পরিবর্তন করেন। এলাকায় পরিচিতি পান সুজন হুজুর হিসেবে। এই মাদরাসা ও এতিমখানার কর্তৃত্ব বজায় রাখতেই এই সুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এলাকাবাসী বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে আন্দোলন করতে থাকে, মুহতামিম পদে ভালো কোন হুজুরকে নিয়োগের দাবীতে তারা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছিল। এই আন্দোলনকারীদের মুখ বন্ধ করতে পাশর্^বর্তী খলিলপুর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী বকুলের শরনাপন্ন হন ওই সুজন হুজুর ও তার সমর্থকরা। বকুলের লোকজনকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্যে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও ওই হুজুর মাদরাসার সামনের জায়গাতে দোকান করার ব্যবস্থা করে দেন। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা ওই দোকানের খুটি ভেঙ্গে দিলে তারা গোলাম রসুল বকুলকে খবর দেয়। পরে বকুল বাহিনীর লোকজন সংঘবদ্ধ ভাবে এসে গ্রামবাসীর উপর হামলা চালায়। এ সময় ওই বাহিনীর লোকজন খলিলপুর থেকে এসে ওই এলাকার রশিদ মোল্লার দোকান বাড়ি, জাফর মন্ডলের বাড়ি ঘরসহ বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালায়। এতে কমপক্ষে ৭/৮ জন আহত হয়। পরে নিজেরাই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাদের গুনকৃর্তন করে বিভিন্ন পোষ্ট দিতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে ওই এলাকায় বর্তমানে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। এই গোলাম রসুল বকুলের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে জলাশয় ও জমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে ওই মাদরাসা ও এতিমখানার মুহতামিম আবু তালহা সুজন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তার মাওলানা লাইনে পড়াশুনার কোন প্রাতিষ্ঠানিক সনদ নেই। তিনি দাবী করেন ঠাকুরগাও জেলার কালীগঞ্জ হাফিজিয়া মাদরাসায় কয়েক বছর পড়াশুনা করেন এবং কারীয়ানার উপর তার বিশেষ প্রশিক্ষন নেন। তবে তিনি গাড়ি ব্যবসা ও বগুড়া রুটে গাড়ি চালানোর কথা স্বীকার করেন। পরে তার খালু তাকে জোর করে মাদরাসার পরিচালনার জন্য প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। গাড়ি চালানো বাদ দিয়ে হুজুর হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনিও ইচ্ছে করলে হুজুর হতে পারবেন। মাদরাসা থেকে কত বেতন নেন সম্মানী হিসেবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কোন বেতন ভাতা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করি। তাহলে পরিবার পরিজন নিয়ে চলেন কি করে জানতে চাইলে তিনি কবিরাজী করে উপার্জিত টাকায় চলার কথা স্বীকার করেন। তার নিয়োগের সময় কারা তাকে নিয়োগ দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি তার খালু লোকমান মাষ্টারের কথা বলেন। পরে ওই মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি লোকমান হোসেনের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, সে ফোন ব্যবহার করেন না।
হুজুর মানুষ হয়ে ফেৎনা ফ্যাসাদ করেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজন এসে ঝামেলা করেছেন, আমি অনুরোধ করেও থামাতে পারি নাই। যেখানে দোকান ঘর করছিলেন সেটিও মাদরাসার জায়গা নয়, সরকারী সম্পত্তির কথাও বলেন তিনি।
Leave a Reply