পাবনার দুলাই ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান মেম্বারদের মমধ্যে হাতাহাতি ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক ইউপি মেম্বার মকবুল হোসেনসহ অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। সোমবার দুলাই ইউনিয়ন পরিষদে এই ঘটনা ঘটে।
দুলাই ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান রহমত আলী খান জানান, সারা দেশের ন্যায় দুলাই ইউনিয়ন পরিষদেও সোমবার টিসিবির পণ্য বিতরণের নির্ধারিত দিন ছিল। এ দিন সকল ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিল। সকাল ১১ টা থেকে নির্ধারিত কার্ডধারীদের টিসিবির পণ্য দেয়া শুরু হয়। দুপুরের দিকে টিসিবির পণ্য বিতরণ বন্ধ করে চেয়ারম্যানের নির্দেশে সম্পূর্ণ অনিয়ম তান্ত্রিক উপায়ে আবারও গোডাউন খুলে পণ্য দেন কার্ডবিহিন লোকজনের মধ্যে।
এ সময় উপস্থিত ইউপি সদস্যরা কার্ডবিহিন লোকজনকে টিসিবির পণ্য দিতে নিষেধ করেন। কেননা আগামীকাল কার্ডধারীরা এলে তাদের মালামাল দিতে হবে এমন কথা বললে চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান ক্ষিপ্ত হয়। চেয়ারম্যান শাহজাহান ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে উপস্থিত ইউপি সদস্যদের। এ সময় ইউপি সদস্যরা গালিগালাজ করতে নিষেধ করায় অতর্কিত ভাবে চেয়ারম্যান নিজে এবং তার সাথে থাকা ক্যাডার বাহিনী নিয়ে হামলা চালায় মেম্বারদের উপর। এ সময় মকবুল মেম্বরসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। আহতদের সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন বলেন, অনিয়ম করে টিসিবির পণ্য বিতরণ করায় বাধা দিলে সে আমাদের উপরে হামলা চালিয়ে মারপিট করেন। আমি বর্তমানে সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছি। আমি এই দূর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানের বিচার চাই।
উপস্থিত ইউপি সদস্যরা জানান, ইতিপূর্বেও দুলাই ইউপি চেয়ারম্যান মো: সিরাজুল ইসলাম শাহজাহানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলেন আট ইউপি সদস্য ও মহিলা সদস্য। তৎকালীন সময়ে পরিষদের ৮ জন সদস্য স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দাখিল করেন। অভিযোগে বলা হয়, দুলাই ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান ইউনিয়ন পরিষদে নানা অনিয়ম, অনাচার ও স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছেন। হঠাৎ করে সদস্যদের না জানিয়ে মাসিক সভা ডেকে এজেন্ডা বিহীন কার্যক্রম তৈরি করেন তিনি। এতে কখন কি পরিমাণ বরাদ্দ আসে তা সদস্যদের জানানো হয় না। পরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা চেয়ারম্যানের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরোধিতা করলে তাদের প্রকল্প বরাদ্দ থেকেও বঞ্চিত করেন। ইউনিয়ন পরিষদের হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স ফি বাবদ আয় হওয়া টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হচ্ছে তা চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞেস করা হলেও সভায় তিনি তা জানাননি। এছাড়া ভূমি হস্তান্তর কর ও হাটবাজার খাতে কত টাকা আয় কিংবা ব্যয় হয়েছে তাও জানানো হয়নি সদস্যদের।
এছাড়াও এই ইউপি চেয়ারম্যান পবত্রি ঈদ-উল ফতির উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী অসহায় ও দুঃস্থ মানুষরে জন্য জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ দেন। সেখানে চেয়ারম্যান শাহজাহান উক্ত বরাদ্দ থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা কেটে ৪৫০ টাকা করে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি ভজিএিফ র্কাডধারী বেশ কিছু দুঃস্থ ও অসহায়দের জন্য বরাদ্দ জনপ্রতি ৪৫০ টাকা না দিয়ে নিজস্ব লোক দিয়ে ভুয়া স্বাক্ষর ও টিপসহি দিয়ে মাস্টাররোল পূরণ করেন এই ইউপি চয়োরম্যান। যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার একটি তদন্ত
এসব অভিযোগের বিষয়ে দুলাই ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম শাহজাহান অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করেছে তাদের উদ্দেশ্য আমাকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা। দূর্যোগ আবহাওয়ার জন্য বেশকিছু লোকজন আসেনি। ৫ জন লোকআসার পর ডিলার দিতে গেলে মেম্বাররা ডিলারকে বকা দেয়, এ সময় আমি গিয়ে ঠেকিয়ে দেই।
এ বিষয়ে ডিলার রতনের (০১৭১৪ ৯৩০১০৮) মুঠোফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু না বললেও তিনি বলেন টিসিবির পণ্য বিতরন আপাতত বন্ধ করা হয়েছে, পরবর্তীতে দেয়া হবে। ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের হাতে মার ও লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply