অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলায় পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক হাসিবুল খান সানাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে করেছে পুলিশ। সোমবার বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, সাঁথিয়া উপজেলার চরভদ্রকোলা গ্রামের হেলাল উদ্দিনকে মারপিট করে রবিবার বিকালে অপহরণ করে নিয়ে আসে সানা ও তার সহযোগীরা। পরে, উপজেলা সদরের ডাক বাংলো এলাকায় ‘সাঁথিয়া পৌর সভার মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চুর ব্যাক্তিগত কার্যালয় ‘ফেস টু ফেস’ অফিসে হেলালকে আটকে রেখে মারপিট করে এবং ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। হেলালের এক আত্মীয় বিষয়টি সরকারি সেবা ৯৯৯ এ অভিযোগ দেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে সাঁথিয়া থানা পুলিশ ৫ জনকে রবিবার সন্ধ্যায় ফেস টু ফেস অফিস থেকে আটক ও অপহৃত হেলাল উদ্দিনকে উদ্ধার করে। আটককৃতরা হলেন, হাসিবুল খান সানা (পিতা- জামাল উদ্দিন, কোনাবাড়িয়া), মেহেদী হাসান রুবেল (পিতা-জামাল সরদার, চক নন্দনপুর), সন্দ্বীপ কুমার (পিতা-নৃপেন চন্দ্র, কোনাবাড়িয়া), ইয়াছিন আলী (পিতা-আজগর আলী, চরভদ্রকোলা), মিলন (পিতা-আবুল কালাম)।
এ ব্যাপারে হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় একটি অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৪২, ৩৬৫, ৩৩৪ এবং ৩৮৫ ধারায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, চিহ্নিত এই সন্ত্রাসী চক্র চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মামলা রুজু করা হয়েছে। বিকেলে আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদনও করবে পুলিশ।
হাসিবুল খান সানাকে ২০২০ সালের ২৯ আগস্ট চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর পরই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাকে সাঁথিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করে। চার মাস হাজত বাসের পর সে জামিনে মুক্তি পায়। পরবর্তীতে, তদবির করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহা করিয়ে পদ ফিরে পান সানা।
অপরদিকে, সানার সহযোগী মেহেদী হাসান রুবেল একাধিকবার চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসের অভিযোগে গ্রেফতার হয়। সম্প্রতি, সাঁথিয়া সাব রেজিস্ট্রি অফিস প্রাঙ্গণে অফিস চলাকালীন সময়ে রুবেল এবং তার ৫ সহযোগী স্থানীয় কৃষক ফরিদ আলীকে মারপিট করে। আহত ফরিদ সাঁথিয়া হাসপাতালে চিকিৎসারত থাকা অবস্থায় হাসপাতালে গিয়ে রুবেল ও সহযোগী বিশু ফরিদকে মামলা না করতে হুমকী প্রদান করে। ফরিদ নিজেই বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করে।
চাঁদাবাজ চক্রের সন্ত্রাসী তৎপরতার প্রতিবাদ করায় গত ২৫ মে রাতে সানা, রুবেল গং হামলা করে ‘সংবাদ’ এর সিনিয়র সাংবাদিক হাবিবুর রহমান স্বপনকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। তিনি অল্পের জন্য রক্ষা পান। হাবিবুর রহমান স্বপন বাদী হয়ে সানা ও রুবেলসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে সাঁথিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনি”্ছুক একটি সূত্র জানান, সাঁথিয়া পৌর মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চুর আশ্রয় প্রশ্রয়ে সানা, রুবেল ও বিশুর নেতৃত্বে চাঁদাবাজি, মারপিটসহ নানা অপকর্ম করে বেড়ায়। অপহরণের পর ভুক্তভোগীদের আটকে রেখে নির্যাতনের টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হয় মেয়র বাচ্চুর ব্যক্তিগত কার্যালয়।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চুর মুঠোফোনে ফোন করে তা দীর্ঘ সময় বন্ধ পাওয়া গেছে।
Leave a Reply