শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৫:১০ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
বাউয়েট এ, “সরকারী খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রম” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত নিখোঁজের দুইদিন পর যমুনা নদী থেকে কিশোরের বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার চরতারাপুরে বালু মহলে পুলিশের ওপর চেয়ারম্যানের লোকজনের হামলা, সরঞ্জাম জব্দ ভোগান্তি লাঘবে দাপুনিয়া বাজার অগ্রণী এজেন্ট ব্যাংক দারুণ সহায়ক বাউয়েটে ডিবেটিং সোসাইটির এক্সিকিউটিভ কমিটি ঘোষণা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন প্রক্টর মো. কামাল হোসেন পাবনা হাসপাতালে দালালের বিরুদ্ধে নার্সকে মারধরের অভিযোগে কর্মবিরতি বাউয়েট আইন অনুষদের তিন সদস্য বিশিষ্ট টিমের দিল্লি ল’ কনফারেন্সে অংশগ্রহন। মুক্তিতে বাধা নেই সাবেক এমপি সেলিম রেজা হাবিবের দুলাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসীন্দাদের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের কম্বল বিতরণ

সাঁথিয়ায় মতিন হত্যা নিয়ে জনমনে নানা গুঞ্জন, মালয়েশিয়া প্রবাসীও আসামী

নিজস্ব প্রতিনিধি, পাবনামেইল টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • প্রকাশিত সোমবার, ২০ জুন, ২০২২
Pabnamail24

সাঁথিয়া পৌরসভাধীন ছোট পুঁটিপাড়া গ্রামের মৃত মহির উদ্দীনের ছেলে আঃ মতিনকে (৫৫) গত ৪ জুন রাতে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পরদিন নিহতের দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই ও নাগডেমড়া ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে একই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই চেয়ারম্যান হাফিজুরকে আটক করে থানা পুলিশ। চেয়ারম্যানকে আটকের পর থেকেই এলাকায় চলছে নানা গুঞ্জন। তার মুক্তির দাবিতে চলছে বিভিন্ন কর্মসূচি।

এদিকে এই মামলার ৬ নং আসামী সোনাতলা গ্রামের মৃত জসিম ফকিরের ছেলে আজিবর রহমান (৪৩) গত ৯ বছর মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। একজন প্রবাসীকে এ হত্যাকান্ডের আসামী করায় জনমনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।এলাকাবাসী বলছেন,প্রাথমিক তদন্ত না করেই পুলিশ এ মামলা রেকর্ড করেছে।এছাড়া এ হত্যাকান্ডে জসিম ফকিরের বড় ছেলে রোসনাইকে হুকুমদাতা করায়ও জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

অনুসুন্ধানে জানা গেছে, ঘটনার দিন বিকেলে জুয়েল রানা আ: মতিনকে নিয়ে বের হয়ে সোনাতলা থেকে সড়কপথে পাশর্^বর্তী ছেচানিয়া বাজারে যায়। সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত করে সন্ধ্যায় মেয়ের বাড়িতে যায়। মামলার এজহারে এরকম লেখা থাকলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই দিন জুয়েলের মেয়ে ও জামাই বাড়িতে ছিল না। তারা গত ঈদের পর থেকেই পাবনা শহরে অবস্থান করছিল। প্রশ্ন রয়ে যায়, তাহলে, কেন, মেয়ের বাড়ি, কিভাবে ফলমূল নিয়ে গেল? কে তাদের আপ্যায়ন করলো? শুধু তাই নয়, রাত সাড়ে আটটায় সড়কপথে না গিয়ে রহস্যজনক কারণে নির্জন ইছামতি ডাইক দিয়ে হেঁটে ফেঁচুয়ান ঘাটে নদীপারের জন্য অপেক্ষা করে তারা। যে ঘাটে শুধু কৃষকেরা ওপারে জমিতে চাষাবাদ ও কৃষিপণ্য আনা নেয়ার জন্য পারাপার হয়। ঘটনার দিন ওই নদীতে মাছ শিকার করতে যাওয়া কাজল ও বাবুও তাদের সাথে ওপারে যায়। মৎস্যশিকারী বাবু জানান,তারা পার হয়ে চলে যাওয়ার ১৫/২০ মিনিট পর একজন মানুষের চিৎকার শুনতে পাই। চিৎকার শুনে সে কাজলকে সাথে নিয়ে এগিয়ে গেলে ভয় পেয়ে আশপাশের লোকজনকে ডাকতে থাকে। অথচ আশপাশে প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে কোন বাড়িঘর নেই। এখানেও রহস্য রয়ে যায়।

পরে নদীর কিনারে গিয়ে দেখতে পান, কচুরিপানার মধ্যে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে বলছে, আমি হারুন চেয়ারম্যানের ছোট ভাই, আমাকে বাঁচান। কিছুক্ষণ পরে জুয়েলের স্বজনেরা এসে কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করেই তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এ সময় বাবু আরও বলেন, জুয়েলকে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা দু’জন ফিরে আসতে কিছুদূর এসে রাস্তার পাশে মতিনের লাশ দেখতে পাই। ভয়ে আমরা কাউকে কিছু না বলে চলে আসি। পরে লাশের দিকে একটা মোটরসাইকেল আসতে দেখি। ঘটনার সময় সাথে থাকা একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী জুয়েল রানা জানান, বাহাদুরসহ ৬/৭ জনকে চিনতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে মামলায় বাহাদুরের নাম এজারভুক্ত করা হয়নি। এদিকে জুয়েলের দেয়া বক্তব্যতে হাফিজুর রহমানের নামও আসেনি। অথচ রহস্যজনকভাবে প্রধান আসামি হয়ে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত তরুণ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান। ফলে এ নিয়ে এলাকায় চলছে নানা গুঞ্জন।

কে এই রোসনাই?মামলার এজাহার অনুযায়ী হাফিজ চেয়ারম্যান রোসনাই’র হুকুমে মতিনকে কুপিয়ে রক্তাক্ত কর্েেছন।ওই রোসনাই হলো ৬ নং আসামী মালেশিয়াপ্রবাসী আজিবরের বড় ভাই। সে বিভিন্ন লোকের বাড়িতে কাজকর্ম করে খাওয়া দিনমজুর।মতিনের মেঝো মেয়ে শারমিন বলেন, আমার মা বাদী হতে চেয়েছিল কিন্তু সাবেক চেয়ারম্যান হারুন জোর করে নিজেই বাদী হয়েছে। এজাহারভূক্ত ৬ নম্বার আসামি আজিবরের স্ত্রী সনজীদা খাতুন বলেন,আমার স্বামী ২০১৪ সালে মালাশিয়ায় গেছে। এ পর্যন্ত একবারও দেশে আসে নাই। মামলার বাদীর ভাই একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী জুয়েল আমার স্বামীর বন্ধু ছিল। জুয়েলের কাছে আমরা জমি বাবদ টাকা পাবো। এ মামলার আসামীদের আরও বেশ ক’জন বাদী হারুন ও তার ভাই জুয়েলের কাছে অনেক টাকা পাবে বলে স্থানীয়রা জানান। তিনি বলেন, আমার স্বামী মালেশিয়া থেকে কিভাবে হত্যা মামলার আসামি হলো সেটাই প্রশ্ন? এদিকে ৭ জুন চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানের মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন তার পরিবারের সদস্যরা। সাঁথিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে হাফিজুর রহমানের স্ত্রী মিতু খাতুন লিখিত বক্তব্যে বলেন, তার স্বামী একজন জনপ্রিয় চেয়ারম্যান।তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মতিন হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের সাথে তার কোন রকম সম্পৃক্ততা নেই।হারুন অর রশীদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর একের পর এক নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, নিহত মতিনের স্ত্রী, ভাই এবং সন্তানাদী থাকা সত্ত্বেও হারুন অর রশীদ অন্য গ্রামের বাসিন্দা হয়ে এ মামলার বাদী হওয়ায় জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি তার স্বামীর নি:শর্ত মুক্তি দাবি করেন এবং এ হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্ত দাবি করে প্রকৃত হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি করেন। এদিকে ৮জুন প্রধান আসামীর ফাঁসী ও অন্য আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাবেক চেয়ারম্যান পক্ষ। অপরদিকে গত ১৫ জুন নাগডেমড়া ইউপি’র সদস্যরা হাফিজুর রহমানের মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন সাঁথিয়া প্রেস ক্লাবে। এ সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মনসুর রহমান বলেন, তাদের জনপ্রিয় চেযারম্যানকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মতিন হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। ঘটনার রাতে ওই সময় চেয়ারম্যান হাড়িয়া ক্যানেলের ওপর চায়ের দোকানে লোকজনের সাথে মতবিনিমিয় করছিলেন। তিনি ও অন্যান্য ইউপি সদস্য তাদের চেয়ারম্যানের অবিলম্বে নি:শর্ত মুক্তির দাবি করেন এবং সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এ হত্যার ক্ল্য উদঘাটনের জোর দাবি জানান। এছাড়া গত শনিবার(১৮ জুন) সোনাতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে।এ ব্যাপারে সাবেক চেয়ারম্যান হারুন-অর রশিদ জানান, হাফিজুর রহমান আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। দীর্ঘদিন সে আমার কর্মীদের উপর অত্যাচার করে আসছিল। আমার চাচাতো ভাইকে সে ও তার লোকজন হত্যা করেছে।

নিহত আ: মতিনের স্ত্রী আজিরন (৫০) বলেন, আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন রাতে তার স্বামীকে জুয়েল বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় দাওয়াত খেতে। পরে তার মৃত্যুর খবর পাই। এলাকাবাসী ও সুধীসমাজ জানান, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন সাবেক চেয়ারম্যান হারুন-অর রশিদ গ্রুপের সাথে বর্তমান চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছিলো। এ দ্বন্দ্বের জেরেই সাবেক চেয়ারম্যানের আত্মীয় খুন হয়। বিষয়টি রহস্যময়। তারা সঠিক তদন্তের মধ্যেদিয়ে এ হত্যাকান্ডের কু¬্য উন্মোচনের দাবি জানান। এদিকে এ হত্যাকান্ডের ১৬ দিন অতিবাহিত হলেও রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মঈনুল হোসেন মিলন বলেন, নিবিড়ভাবে মামলার তদন্ত চলতেছে। সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, মামলার প্রধান আসামী বর্তমান চেয়ারম্যানসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য পুলিশ নজর রাখছে। ঘটনাটি অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

বিভাগের আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!