পাবনায় জেলা আওয়ামীলীগকে উপেক্ষা করে গঠনতন্ত্র অমান্য করে সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন করার অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্যের পছন্দের লোকেদের কমিটিতে আনতে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করে জেলা আওয়ামীলীগের অনুমোদন ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এ সম্মেলন করা হয়েছে। সম্মেলনে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন না। বিতর্ক ওঠায় সম্মেলনে যোগ দেননি প্রধান অতিথি আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমানও। তবে, বিধি মোতাবেক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন দলের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।
সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সূত্রে জানা যায়, ২৫ অক্টোবর মঙ্গলবার সাঁথিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন আয়োজন করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও পাবনা ১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর সমর্থকরা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের জন্য জেলা আওয়ামীলীগের সাথে সমন্বয় ও অনুমোদন নিয়ে তারিখ নির্ধারণ করতে হয়। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি রাষ্ট্রীয় কাজে বিদেশে থাকাকালীন সময়ে তড়িঘড়ি করে সম্মেলন করা হয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকেই অনিয়মতান্ত্রিক এ সম্মেলন আয়োজন সমর্থন না করলেও, সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর ভয়ে বাধ্য হয়ে সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ সম্মেলনে সভাপতি সাঁথিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দেলোয়ার।
তিনি আরো বলেন, নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্মেলন আয়োজনের জন্য আমি এমপি টুকু ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনকে বলেছিলাম। কিন্তু এমপি সাহেব আমাকে বলেন, আপনি না আসলেও সম্মেলন হয়ে যাবে। আমরা যেদিন বলেছি সেদিনই সম্মেলন করতে হবে। বাধ্য হয়েই আমি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেছি। সেখানে পরিকল্পিত ভাবে আমাকে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীর পাশে থাকতে গিয়ে অনেক সময় আমি টুকু এমপি সাহেবের অনেক সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছি। ফলে, গায়ের জোরে অবৈধ সম্মেলন করে আমাকে পদচ্যুত করা হয়েছে। বিতর্ক ওঠায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি দলের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান সাহেবও সম্মেলনে আসেননি।
আমি বিষয়টি দলীয় সভানেত্রীকে অবহিত করবো।
সম্মেলনে উপস্থিত না হওয়া প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলেন, সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন জেলা আওয়ামীলীগের সাথে সমন্বয় করে হয়নি। সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি দেশে ফিরলে এ বিষয়ে আমরা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেবো।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি বলেন, পাবনায় সকল উপজেলা ও সাংগঠনিক ইউনিটে আমরা জেলা আওয়ামীলীগের মাধ্যমে গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে উৎসব মুখর পরিবেশে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করেছি। কিন্তু পাবনা ১ সংসদীয় এলাকার কমিটি গুলোতে জেলার সাথে সমন্বয় করা হয়নি। এর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্যের একক ইচ্ছায় প্রধান অতিথিসহ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুপস্থিতিতে, জেলা আওয়ামীলীগের আপত্তি স্বত্ত্বেও অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বেড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন করা হয়েছে। সেখানে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকও উপস্থিত ছিলেন না। সংসদ সদস্য টুকু সাহেব সে সম্মেলনে নিজের ছেলে আসিফ শামস রঞ্জনকে সভাপতি ও নিজ বলয়ের এক নেতাকে সাধারন সম্পাদক ঘোষণা করেন। নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় না হওয়ায় জেলা আওয়ামীলীগ বেড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সে কমিটিকে অনুমোদন দেয়নি।
এরই মাঝে আবারও একই ভাবে বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন করা হলো। এটি দলের শৃংখলা পরিপন্থি।
গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ক্রমে রাষ্ট্রীয় কাজে দেশের বাইরে থাকায় আমি সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের তারিখ কয়েকদিন পেছাতে অনুরোধ করেছিলাম। স্থানীয় সংসদ সদস্য টুকু সাহেবের সাথেও আমার এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তারপরও কেন তারা এমন তাড়াহুড়ো করে আমার অনুপস্থিতিতে সম্মেলন করলেন বিষয়টি বোধগম্য নয়। আমি দেশে ফিরে দলের নেতাদের সাথে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।
এ বিষয়ে কথা বলতে পাবনা ১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু এমপির মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে, আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জেলা আওয়ামীলীগের সাথে আলোচনা করেই সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন হয়েছে। জেলার নেতাদের উপস্থিত না হওয়া একান্তই তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। সম্মেলন নিয়ে অযথা বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ নেই। এমপি সাহেবের ইচ্ছায় সম্মেলন হয়নি, দলের গঠনতন্ত্র মেনেই আমি সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছি।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ দেলোয়ারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ তপন হায়দার সান এর সঞ্চালনায় জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া জাহান, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ মেরিনা জাহান কবিতা ও সৈয়দ আব্দুল আওয়াল শামীম, পাবনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আ স ম আব্দুর রহিম পাকন বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে এডভোকেট হাসান আলীকে সভাপতি ও তপন হায়দার সানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।
Leave a Reply