পাবনায় নান্দনিক সাজসজ্জা ও কড়া নিরপত্তার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। দুষ্টের বিনাশ ও সৃষ্টের পালন করতে বছর ঘুরে আবারো দুর্গতিনাশিনী দশভুজা ‘মা দুর্গা’ এসেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে। গতকাল ষষ্ঠি তিথিতে অশ্বমেথ বৃক্ষের পূজার মাধ্যমে আবাহন করা হয় দেবী দুর্গার। ঢাক-ঢোল আর কাঁসার বাদ্যে দেবীর বোধন পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আজ রবিবার সপ্তমী তিথিতে চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে প্রাণ সঞ্চার করা হবে দেবীর মৃন্ময়ীতে। পরদিন মহা অষ্টমী তিথিতে সনাতনী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ সকলে মিলে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেয়া হবে। এইদিনই হবে সন্ধিপূজা।
মাতৃরূপে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করে হবে ‘কুমারী পূজা’। শাস্ত্রমতে, এদিন পূজিত কুমারী কন্যার নামকরণ করা হয় ‘উমা’। ভক্তদের মতে, এটি একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। মূলত নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা। নবমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর মহা প্রসাদ বিতরণ করা হবে। সর্বশেষ দশমী তিথিতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হবে দেবী দুর্গাকে। আর দেবীর এই আগমনকে ঘিরেই ব্যস্ত সময় পার করছেন দেশের প্রতিটি অঞ্চলের পূজা সংশ্লিষ্টরা।
পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন জানান, এ বছর পাবনায় ৩৫৭টি মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। যুগ যুগ ধরে এই অঞ্চলের সকল ধর্মের মানুষ বাঙ্গালী সংস্কৃতিতে সোর্হাদ্য সম্প্রীতিতে বসবাস করে আসছে।সেই ধারাবাহিকতায় এবার ও আসন্ন দুর্গা পুজা উৎযাপিত হবে সকলের সহযোগীতায় সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে। যারা এই অনুষ্ঠান নিয়ে ষড়যন্ত্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ঠ করতে চায় তাদের দেশ প্রেমের অভাব আছে। পাবনায় সকলের সহযোগীতায় দূর্গাপুজা উৎযাপিত হবে আনন্দঘন পরিবেশে –নিরাপদ নির্বিঘ্নে।
দূর্গাপূজা উপলক্ষে পাবনার মন্ডপ গুলো সেজেছে বর্ণিল সাজে। ডিজিটাল আলোকসজ্জা, তোরণ, মন্ডপের নান্দনিক ডেকোরেশনে মন্ডপ গুলোতে যেন চলছে প্রতিযোগীতা। শহরের রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, বাড়োয়াড়ী মা মন্দির, শহীদ পল্টু ক্লাব, রাধানগর বাড়োয়ারী মন্দির, শ্রী শ্রী জিউ বিগ্রহ দেব মন্দিরসহ
প্রতিটি মন্ডপ সেজেছে বর্ণিল রঙে।
রামকৃষ্ণ সেবা আশ্রমের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক প্রদীপ কুমার সাহা জানান, রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমে পূজা আয়োজনে সব সময়ই বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুসরণ করা হয়। এবারেও তার ভিন্নতা হবে না। প্রতিমা তৈরীতেও বিশুদ্ধ পঞ্জিকা ও রীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। সে প্রথা অক্ষুণ্ন রেখেই এবার প্রতিমায় আধুনিকতার সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতিদিনই দুপুরে মন্দিরে ভক্ত, দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে প্রসাদের আয়োজন।
শ্রী শ্রী জয়কালী বাড়ী মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রলয় চাকী বলেন, ঐতিহ্যবাহী জয়কালীবাড়ী মন্দিরে প্রতিবারের ন্যায় এবারেও দূর্গাপূজার জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করা হয়েছে। মন্দির কমিটির সদস্য এবং সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও স্থানীয় সকল সম্প্রদায়ের মানুষ আমাদের সহযোগিতা করছেন। ইতিমধ্যেই জাতীয় সংসদের মাননীয় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু এবং সদর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স মন্দির পরিদর্শণ করেছেন। আমরা সম্মিলিতভাবেই সবার অংশগ্রহণে এবারের দূর্গোৎসব পালন করবো।
পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র ঘোষ বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি এখন শেষ হয়েছে। বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসার পর প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আস্থা, সরকারি অনুদান ও শুভানুধ্যায়ীদের অনুদান নিঃসন্দেহে পূজার সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। নিরপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও আমরা সন্তুষ্ট।
Leave a Reply