প্রিয়জন হত্যার কঠিন ও নির্মম স্মৃতি ধারণ করেও বাঁচতে হয় ভবিষ্যতের পানে তাকিয়ে। শোক বিহ্বল হওয়া সত্বেও মানুষ কতটা চিত্তের প্রবল শক্তিতে বলিয়ান হয়ে সকল চক্রান্তের মুখে বজ্র কঠিন দৃঢ়তার সাথে দাঁড়িয়ে দেশ মাতৃকার সেবায় নিয়োজিত হতে পারেন, দেশবাসী আজ এমনই এক মহিয়সী নারীর কথা বলছে। বলিষ্ঠ চিত্তের, যে মানুষটিকে সম্পূর্ণ বিপরীত এবং ক্রোধোন্মুখ প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় অবিচল এবং ন্যায় নিষ্ঠ মানসিকতায় দৃঢ় থাকেন দুধিষ্ঠিরের মতো তিনি দক্ষিণ এশিয়ার উপমাযোগ্য অনন্য নেত্রী গণতন্ত্রের মানস কন্যা, মানবতার মাতৃরূপ বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
পারিবারিক বিয়োগ-ব্যথা যেখানে ১৫ আগস্টের মতো এক বিভৎস নির্মম শোকগাঁথা, প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রতিহিংসা পরায়ণ নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের ভয়াল ইতিহাস, সেখানে পরিবারের এতগুলো প্রিয়জন এমনকি কনিষ্ঠভ্রাতা শিশু শেখ রাসেলসহ ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ ঘটনানোর পর স্রষ্টার অপার অনুগ্রহে বেঁচে থাকা দুটি বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা আজও সেই দুঃসহ বিয়োগ ব্যথ্যা বুকে ধারণ করে পিতার আদর্শে উজ্জীবিত থেকে ভয়কে জয় করে নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের মুখে সুখের হাঁসি ফুটানোর জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। নিষ্ঠুর প্রতিপক্ষ দেশী বিদেশী ষঢ়যন্ত্রকারী হন্তারক গোষ্ঠি তাঁর প্রাণ সংহারে শত কুটকৌশল এঁটেই চলছে-যার নিকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা। এরপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের সম্পদ হয়ে, নৈতিকতার প্রাবল্যে উচ্চকিত পরিনামদর্শী পথ প্রদর্শক, শঙ্কাহীন আলোর পথের অভিযাত্রী।
তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ঐশ^র্য অপরিমেয় প্রাণশক্তি, নিখাঁদ দেশপ্রেম, সুতীক্ষè চৈতন্যবোধ এবং মাতৃভূমির প্রতি নির্মোহ আনুগত্য, আর পিতা মুজিবের ন্যায় “সাধারণ মানুষের উপর অগাধ বিশ^াস ও ভালবাসা।” আমাদের একজনই শেখ হাসিনা যিনি নানাবিধ প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে নিঃশঙ্কচিত্তে শত্রুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কেবল দেশপ্রেমের পরীক্ষাই দেননি-তিনি সকল প্রতিকুলতাকে অতিক্রম করে গণ বিরোধী চক্রের ‘কাশিম বাজার কুঠি’র নিগূঢ় শলা পরামর্শের নীল নক্সা তছনছ করে একজন প্রীতিলতা সেন কিংবা ইলা মিত্রের মতো জনগন ও দেশের জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন দেবার দুঃসাহস দেখাতে পারেন তিনি আমার শ্রদ্ধেয় হাসু আপা। তাঁর ৭৬ তম জন্মদিনে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এবং আমার জাতীয় সংসদ নির্বাচনি আসনের আপামর জনগণের পক্ষ থেকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা, সালাম ও অভিনন্দন জানাই।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সংগঠন তথা কল্যাণমুখী রাষ্ট্র পরিচালানার সুদক্ষ প্রতিষ্ঠানের পরিনত রুপ পেয়েছে। কর্মীরাই এ প্রতিষ্ঠানের প্রাণ ভোমরা। তাঁরাই বঙ্গবন্ধু আদর্শিক সংগঠনকে টিকিয়ে রেখেছেন, বাঁচিয়ে রেখেছেন, এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আগামী প্রজন্মের জন্যে। জাতির পিতা তাঁর সাংগঠনিক সন্তানদের পিতৃস্নেহে আগলে রাখতেন। যথাযথ মূল্যায়ন করতেন, তৃণমূল পর্যন্ত কর্মীদের চিনতেন, নাম জানতেন, পারিবারিক খোঁজ নিতেন।
প্রিয় সংগঠনের প্রতিটা কর্মীর হৃদয়ের স্পন্দন প্রিয় হাসু আপা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সম্মানিত সভাপতি, জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসূরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও পরম মমতায় মাতৃস্নেহে বা বোনের ভালোবাসায় আদর্শিক কর্মীদের পাশে থেকেছেন, মূল্যায়ন করেছেন, আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের কাপুরুষচিত ঘটনার পর দীর্ঘ ২১ বছর দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়নি স্বৈরাচারদের কারণে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত নিদারুণ দুঃসময় ছিল এ সংগঠনের জন্য। অতঃপর নিবেদিত প্রাণ নেতৃবৃন্দের আহবানে দেশে ফিরে আসেন হাসুআপা। সেই থেকে দীর্ঘ ৪২ বৎসর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মূল নেতৃত্বে সমাসীন তিনি, ভোরে ফজরের নামাজের পর কোরআন তেলাওয়াত এবং দৈনিক সংবাদ পত্র পাঠ দিয়ে দিন শুরু হয় তাঁর এবং গভীর রাত অব্দি চলে কর্মযজ্ঞ এবং আগামী দিনের পরিকল্পনা নির্ধারণ। সংগঠনের দায়িত্ব নেবার ১৬ বৎসরের মাথায় তাঁর দৃঢ় পরিকল্পনা ও নেতাকর্মীদের প্রচেষ্টায় দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
শুরু হয় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দ্বিতীয় অধ্যায়ের নতুন ইতিহাস। স্বপ্নদ্রষ্টা হয়ে বাঙালী জাতিকে নতুন স্বপ্নে বিভোর করে তুললেন। যাত্রা শুরু হলো বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের শুরুতেই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হলেন আর এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যস্থীর করলেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সামাজিক সুরক্ষা বলয়ে নিয়ে এসে তাঁদের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করা। প্রবর্তন করলেন নানাবিধ প্রকল্প এবং ভাতা সুবিধা। শিক্ষা ভাতা, যথা সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতাসহ কৃষি ভর্তুকী ও প্রনোদনা প্রদান। কৃষিতে উৎপাদন বিল্পব ঘটানোর লক্ষ্যে কৃষি উপকরণাদির সহজলভ্য করণ। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে প্রতিটা ইউনিয়নের প্রত্যেক ওয়ার্ডে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন এবং প্রশিক্ষিত চিকিৎসক দ্বারা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন। সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে এ্যাম্বুলেন্স প্রদান করেছেন। গৃহহীনদের জমির মালিকানা দিয়ে গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছেন। দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিভাতা বৃদ্ধিসহ ৪ টি বোনাস এবং তাদেরও আবাসন নির্মাণ করে দিয়েছেন প্রিয় জননেত্রী শেখ হাসিনা।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে সর্বাগ্রে দরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন সাধন তাই পাকারাস্তা তৈরি ও সংস্কারের বৈপ্লাবিক পরিবর্তন করেছেন। পদ্মাসেতু তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ যা বিশে^র বিস্ময়। কর্ণফুলি টানেল, মেট্রোরেল, আন্ডার পাস, ওভার পাস, ফ্লাইওভার সকল ক্ষেত্রে তাঁর যুগন্তকারী পদক্ষেপ। কর্মদক্ষতা অর্জনে যুব সমাজকে নানাবিধ কর্মমূখী বাস্তব প্রশিক্ষণ দিয়ে সম্পদে পরিনত করার লক্ষে প্রবর্তন করেছেন কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা।
জননেত্রী তাঁর নির্বাচনি ইস্তেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের ঘোষণা দেন। তখন তথাকথিত প্রাজ্ঞ-অজ্ঞরা তিরস্কার করেছে। তীর্যক হাসি হেঁেসছে অথচ আজ প্রমাণ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এই যুগে দুরদৃষ্টি সম্পন্ন পরিমানদর্শী রাষ্ট্র নায়কের বিজ্ঞোচিত পরিকল্পনা ব্যতিরেকে বিশ^ বলয় থেকে ধুমকেতুর মতো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তো বাংলাদেশ। এ রকম হাজারো গল্পের মুক্তা দিয়ে তৈরি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের গর্বের মুকুট আজ শেখ হাসিনার শীরে শোভা পাচ্ছে। এই কাজগুলো সফলতার সাথে সম্পাদনের জন্য প্রাণশক্তি যুগিয়েছেন তাঁর প্রিয় সংগঠনের বিশ^স্ত সারথী তথা জাতির জনকের আদর্শের সন্তানেরা।
প্রসঙ্গান্তরে কর্মীবান্ধব নেত্রী পাশে দাঁড়িয়েছেন সেই বিশ^স্ত নেতাকর্মীদের যারা দখলদার জেনারেল জিয়া, স্বৈরশাসক এরশাদের অপশাসনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, পঙ্গু হয়েছিলেন, প্রাণ দিয়েছিলেন। তাঁদের পাশে ছিলেন হাসু আপা এখনো আছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামের নিহত পরিবার, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বরাবরই রয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আহতদের চিকিৎসা, পরিবারের দেখভাল, কর্মসংস্থান, অনুদান ও বাদ রাখেননি কিছুই। আহতদের তাৎক্ষণিক বিদেশে পাঠিয়েছেন উন্নত চিকিৎসার জন্য, স্থায়ী পঙ্গুত্ব থেকে রক্ষা করার জন্য। হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, চিকিৎসা, স্থায়ী আয়ের জন্য সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়, এমনকি এফডিআর- এর ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। কাউকে গ্রামে করে দিয়েছেন বাড়ি, ঢাকায় কিনে দিয়েছেন ফ্ল্যাট। দল ও সহযোগী সংগঠনে দিয়েছেন পদ-পদবি, নির্বাচনে মনোনয়নও দিয়েছেন। সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করেছেন নারী ভিকটিমদের। অনুদান নিতে আগ্রহী নন এমন অনেককে রাষ্ট্রীয় সফরসঙ্গী করে বিদেশ নিয়েছেন। কাউকে প্রধানমন্ত্রীর প্লট দিয়েছেন, ফ্ল্যাট নির্মাণ করে নিহতদের পরিবার ও আহতদের মাঝে।
প্রধানমন্ত্রী যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়নও করেছেন। অনেককে সংরক্ষিত আসনের এমপি করেছেন। কাউকে দলের পদও দিয়েছেন। সারা দেশে দীর্ঘদিনের ত্যাগী বর্তমান অবহেলিত বয়স্ক সিনিয়র নেতাদের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনয়ন দিয়ে তাঁদের সম্মানিত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতি করা যে সকল নেতা মারা গিয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যাদের এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়রসহ যোগ্যতানুযায়ী দলে পদায়ন করে রাজনৈতিক মূল্যায়ন করেছেন। অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া মেয়েদের মা হয়ে বিয়ে দিয়েছেন, কাবিন রেজিষ্টারে স্বাক্ষর করেছেন। এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এই আমাদের মানবিক হাসু আপা। এই আমাদের মানবিক শেখ হাসিনা। জয় বাংলা।
Leave a Reply