পাবনায় ভ্যান চালকের স্ত্রী ও ছেলে এক সাথে এসএসসি পাশ করায় এলাকায় আনন্দ বইছে। মা-ছেলের এক সাথে এসএসসি পাশ করার বিষয়টি ওই এলাকার চায়ের দোকান তেকে শুরু করে সর্বত্র মুখরোচক খবর জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে। চলতি বছর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে তাড়াশ শামীমা জাফর মৎস্য ইনস্টিটিউট থেকে মুঞ্জুয়ারা খাতুন ও খানমরিচ বিএম স্কুল এন্ড কলেজ ভকেশনাল শাখা থেকে সুলতানপুর গ্রামের মোঃ আব্দুর রহিমের ছেলে মোঃ মেহেদী হাসান চলতি বছরে এসএসসি পাশ করেন। পরীক্ষায় ভ্যান চালক আব্দুর রহিমের স্ত্রী মুঞ্জুয়ারা খাতুন পেয়েছে জিপিএ- ৪.৯৩ ও ছেলে মেহেদী হাসান পেয়েছে ৪.৮৯।
আব্দুর রহিম ও মুঞ্জুয়ারা খাতুন দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। মেয়েটি ওই গ্রামের সুলতানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী।
মুঞ্জুয়ারা খাতুন তার ছেলের সাথে এসএসসি পাশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০ বছর পূর্বে অভাব অনটনের সংসারে বাবা পাশর্^বর্তী উপজেলা ভাঙ্গুড়ার সুলতানপুর গ্রামে আব্দুর রহিমের সাথে বিয়ে দেন। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসে আর পড়াশুনা হয়ে ওঠেনি। বিয়ের ৪ বছরের মাথায় ছেলের জন্ম হয়। সন্তানদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে আবারও পড়াশোনার প্রতি টান অনুভব করেন মুঞ্জুয়ারা খাতুন।
ছেলের সাথে পরীক্ষা দিয়ে এমন ফলাফল অর্জনের বিষয়টি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না মুঞ্জুয়ারা খাতুন।
সোমবার দুপুরে মুঞ্জুয়ারা খাতুনের সাথে খোলামেলা আলাপকালে তিনি জানান, আমার ফলাফলের নেপথ্যে যা কাজ করেছে, তা হলো ইচ্ছাশক্তি। অনেক কষ্ট করে ছেলেবে বড় করেছি, এমন সময় নিজেরও মনে হয়েছে একটু পড়াশোনা করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু দুই সন্তানের পর নিজের পড়ালেখার খরচ চালানোর সামর্থ্য আমার ছিলো না। তবুও আমি মনোবল হারাইনি।
বিষয়টি নিয়ে আমার স্বামীর সাথে আলাপ করলে তিনি আমার সাহস যোগান দেন। স্বামীর সাহস অনুপ্রেরণা আর আর্থিক সহযোগিতাই আমার এই অর্জন। তবে এসএসসি পাশের পর উচ্চ শিক্ষার আখাংকা বেড়ে গেছে বলেও জানান তিনি। অভাব অনটনে স্বামীর ভ্যান চালানোর টাকায় ছেলে মেয়ে আর আমার পড়াশুনা কিভাবে চলবে সেটা নিয়েও মুঞ্জুয়ারা খাতুন চিন্তিত। তবে তিনি নূন্যতম ডিগ্রী পাশ করতে চান।
ছেলে মেহেদী হাসানও মায়ের সাথে এসএসসি পাশ করায় খুশি। লেখাপড়ার কোনো বয়স নেই। মায়ের সাথে এসএসসি পাশ করে আমি গর্ববোধ করছি। আপনারা দোয়া করবেন আমি যেন একজন মানুষের মতো মানুষ হতে পারি।
খান মরিচ বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হোসেন সাগর বলেন, মেহেদী আমার প্রতিষ্ঠানের ভোকেশনাল শাখার নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিল। তার পাশ করার পর আজ শুনলাম ছেলের সাথে তার মাও এসএসসি পাশ করেছি, বিষয়টি সত্যিই আনন্দের।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন, এ ধরনের উদাহরণ সমাজের জন্য খুবই ইতিবাচক। মা-ছেলে এই সফলতা অনেককেই উদ্দীপ্ত করবে। আমরা তাদেরকে অভিনন্দন জানাই।
Leave a Reply