পাবনার ভাঙ্গুড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে দুই শিক্ষককে পিটিয়ে অনুষ্ঠান পন্ড করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনোয়ার খান মিঠুর নির্দেশে এই মারধর, হামলা ও ভাংচুর করা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষকদের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খানমরিচ ইউনিয়নের ২৮ টি বিদ্যালয়কে দুই ভাগে বিভক্ত করে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে শনিবার ইউনিয়নের চন্ডিপুর খেলার মাঠে ১৪টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশে বাহিরের অতিথিদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে বিদ্যালয়ের প্রবীণ প্রধান শিক্ষকরা সকাল ৯ টায় এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
এদিকে সকাল সাড়ে দশটার দিকে খানমরিচ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনোয়ার খান মিঠু অনুষ্ঠানে এসে দাওয়াত না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় শিক্ষকরা তাকে বসতে বললেও তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যান। এরই কিছুক্ষণ পর শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে প্রধান শিক্ষকরা খেলার মাঠের পাশে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে যান। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে মনোয়ার খানের নির্দেশে তৌকির, মাসুদ ও কালামসহ ১০/১২ জন যুবক লাঠিশোঠা নিয়ে দাসমরিচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানকে (৫৭) পেট তে থাকে। এ সময় অন্য শিক্ষকরা ভয়ে দৌড়ে যার যার মতো পালিয়ে আত্মরক্ষা করে।
এর কিছুক্ষণ পরই তৌকির, মাসুদ ও কালামসহ প্রায় ১০/১৫ জন যুবক লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষকদের উপর হামলা চালায় এবং তারা মাঠ থেকে দ্রুত পালিয়ে আত্মরক্ষা করলে তারা মাঠের মঞ্চ ভাংচুর করে। এই হামলায় চন্ডিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়। এ সময় মাঠ থেকে উপস্থিত সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা চলে গেলে অনুষ্ঠান পন্ড হয়ে যায়।
কয়েকজন শিক্ষক জানান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে অনুষ্ঠানে বিশেষ ব্যক্তিদের দাওয়াত করা হয়নি। চেয়ারম্যানকে আগামী ৩০ তারিখ চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় দাওয়াত করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু এই তুচ্ছ কারণে শিক্ষকদের মারধর করে চেয়ারম্যান এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো। বর্তমানে ওই এলাকায় শিক্ষকরা চরম আতংকে রয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে চেয়ারম্যান মনোয়ার খানের মুঠোফোনে কয়েখবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি জানার পরেই থানা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে সকল শিক্ষা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। থানা প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, শিক্ষকদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, তদন্তে প্রমান পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পাশাপাশি শিক্ষকরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, পুলিশও বিষয়টি দেখছেন। ইতিমধ্যে আমি ওই চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি, তিনি স্বীকার করেছেন যে, তাকে শিক্ষকরা যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করায় তার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে এমন কাজ করেছেন।
Leave a Reply