সতের মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে রবিবার দুপুরে বাড়ির পাশের মাঠে ঘুরতে গিয়েছিলেন বেড়া উপজেলার রূপপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী আবুল হাশেম উজ্জলের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ইমরান হোসেন সাদ্দাম (৩২)। এ সময় প্রতিপক্ষ আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম মোহনের সমর্থক সন্ত্রাসীরা অতর্কিত আক্রমণ করে সাদ্দামের উপর। সাদ্দামের কোলের সন্তানকে কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় তারা। এরপর রড ও হাতুরি দিয়ে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে গুরুত্বর জখম করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন ঘিরে পাবনায় সংঘাত সহিংসতা থামছেই না। বেড়া উপজেলার ঢালারচর, চাকলা ইউনিয়নে ঘটেছে সংঘাত। বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র মহড়া আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সাধারণের মনে। গত কয়েকদিনে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়ার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে এসব ্ইউনিয়নে। সর্বশেষ রূপপুর ইউনিয়নে নৌকার এজেন্টের উপর হামলার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
রূপপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আসন্ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আবুল হাশেম উজ্জল জানান, নির্বাচনে জনগণের সমর্থন না পেয়ে আনারসের প্রার্থী মোহন ও তার সমর্থক আমার কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। আমি এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখতে তাদের উষ্কানিকে তেমন গুরুত্ব দেই নি। রবিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আনারসের সমর্থক সুজন, শফিক, শিহাব, তিতাসের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমার ভাগ্নে ও প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট সাদ্দামকে হত্যার উদ্দেশ্যে নৃশংস আক্রমণ করেছে। সতের মাসের শিশু সন্তানকে কোল থেকে কেড়ে নিয়ে তাকেও মেরেছে। পরে, রড, হাতুরি দিয়ে সাদ্দামের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পিটিয়ে থেতলে দিয়েছে। আমি প্রশাসনের নিকট এর বিচার চাই। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিতের দাবী জানাই।
এদিকে, হামলার ঘটনার পর গুরুত্বর আহত সাদ্দামকে স্বজনরা উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে। সাদ্দামের সাথে হাসপাতালে আসা তার স্ত্রী তিশা বলেন, নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করায় আমার স্বামীকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। আমার শিশুপুত্র তাসিনকেও তারা মেরেছে। দুধের শিশু সন্তানের সামনেই বাবাকে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা করায় সেও আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিনা।
পাবনা সদর হাসপাতালের অর্থপেডিক বিভাগের কনসালট্যান্ট ডাঃ জাহেদী হাসান রুমী জানান, সাদ্দামের মাথা ও পুরো শরীর থেঁতলে দেয়া হয়েছে। তার আঘাত গুরুত্বর। সিটি স্ক্যানের পর প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে। আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জড়িতদের আটকে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান ওসি।
তবে, ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম মোহন। তিনি বলেন, সাদ্দামের উপর কারা হামলা করেছে আমার জানা নেই। তার উপর হামলার সাথে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই বলেও দাবী করেন তিনি।
এদিকে, পঞ্চম দফা ইউপি নির্বাচন ঘিরে অশান্ত হয়ে উঠছে একসময়ের চরমপন্থীদের অভয়ারন্য আমিনপুর থানার ঢালারচর ইউনিয়নও। দূরবর্তী ও গহীন চরে রাজবাড়ী জেলার সীমান্তবর্তী এ্ই ইউনিয়নে অতীতে প্রায় প্রতিটি ইউপি নির্বাচনেই এখানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মহড়ায় সাধারণের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এদিকে, নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের প্রচারণায় নামতে বাধা দেয়া ও হামলার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার কাজীপাড়া ও রামনারায়নপুরে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোমিনুর রহমানের ভোট চাওয়ার সময় হাতুড়ি, লোহার রড,পাইপ দিয়ে পিটিয়ে আহত করে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কোরবান আলী সরদারের ছেলে নাসিমের নেতৃত্বে রাসেদ,আকরাম,শুকুর,তোরাপ সহ ৮/১০ জনের একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী। ঢালারচর ইউপির ঢালারচর কাজীপাড়ায় দেশীয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীরা আসমা খাতুন ও দৌলতি বেগমকে পিটিয়ে আহত করে অপরদিকে রামনারায়নপুরে শাহীন ও রিপনকে হাতুড়ি লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। আহত অবস্থায় তাদের তাদের উদ্ধার করে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মমিন আরো বলেন, ঢালারচরের মানুষ নৌকার প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচনে জনগণের সাড়া না পেয়ে চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভোট ডাকাতির পরিকল্পনা করেছেন। তারা নৌকা ছাড়া কোন প্রতীকে ভোট দিতে দেয়া হবে না বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। এসব কেন্দ্রে নিরপত্তার জন্য আমি জেলা পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছি। তবে, প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবী করেছেন নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী কোরবান আলী সরদার। তিনি বলেন, মমিন নির্বাচনে জনসমর্থন না পেয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ষড়যন্ত্র করে নৌকার বিজয় আটকে রাখা যাবে না।
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলী জানিয়েছেন, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযান বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply