পাবনা বেড়া পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পাবনা ১ (বেড়া- সাঁথিয়া) আসনের সাংসদ শামসুল হক টুকু পরিবারের অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। সাংসদ টুকুর বিরুদ্ধে নিজ ছেলেকে বিজয়ী করতে আচরণ বিধি ভঙ্গ, ক্ষমতার অপব্যবহারে প্রশাসনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা, বহিরাগত ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের লিখিত অভিযোগ করেছেন একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী। জীবনের নিরপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেছেন সাংসদ টুকুর ছোট ভাই বর্তমান পৌর মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল বাতেন। সোমবার নির্বাচন আচরণ বিধি মেনে সাংসদ টুকুকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
স্থানীয়রা জানান, বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাংসদ টুকুর বড় ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা আসিফ শামস রঞ্জন, তার মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাংসদ টুকুর আপন ছোট ভাই বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল বাতেন, চাচার পরিবারকে লুটেরা ও দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে মেয়র পদে লড়ছেন সাংসদ টুকুর বড় ভাইয়ের মেয়ে এসএম সাদিয়া আলম। তিন প্রার্থীকে ঘিরে কেবল পরিবারের সদস্যরাই নয়, বিভক্ত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী ও আওয়ামীলীগ সমর্থকরা। চলছে একে অপরকে আক্রমণ করে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। সভা সমাবেশ, সামাজিক মাধ্যমেও চলছে বাদানুবাদ, তর্ক বিতর্ক। ঘটেছে হামলার ঘটনাও।
এদিকে, নারিকেল গাছ মার্কা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল বাতেনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সামনে রবিবার নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী অফিস বসানো হয়েছে। বিষয়টিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত দাঙ্গা বাধানোর উষ্কানী দাবী করে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন আব্দুল বাতেন।
তিনি আরো বলেন, শামসুল হক টুকু এমপির নির্দেশে বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পৌর এলাকায় আনাগোনা বেড়েছে। এমপির উপস্থিতিতে প্রকাশ্য সভায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী রমজান, ময়ছের, হাকিম বস, হান্নান নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে এলাকা ছাড়া করার হুমকী দিচ্ছে। পায়ে পাড়া দিয়ে ঝামেলা বাধাতেই আমার ব্যববসায়ী প্রতিষ্ঠানের সামনে নির্বাচনী প্রচারণা অফিস স্থাপন করেছেন আওয়ামীলীগ প্রার্থী রঞ্জন। আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদেও নিকট তার কোন অবস্থান নেই বলেই জামায়াত বিএনপির ভোট ভিক্ষে করছেন।
মোবাইল ফোন প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি টুকুর বড় ভাইয়ের মেয়ে এসএম সাদিয়া আলম বলেন, আমার কর্মী সমর্থকদের নির্বাচনী মাঠে নামতেই দেয়া হচ্ছে না। নামলেই বিভিন্ন ধরনের ভয় ভীতি কিংবা শারীরিক ভাবেও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। বেড়া উপজেলায় আওয়ামীলীগের জন্য সাংসদ টুকু ও তার পুত্রদের কোন অবদান নেই। ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে লাভ হবে না। জনগন দূর্নীতির বিরুদ্ধে ও পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিবেন।
রেল ইঞ্জিন প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা এইচএম ফজলুর রহমান মাসুদ বলেন, নৌকার প্রার্থী ও তার সংসদ সদস্য পিতা প্রশাসনকে ব্যবহার করে ভোট ডাকাতির পরিকল্পনা করছেন। নৌকা ছাড়া অন্য কোন প্রতীকে ভোট দিতে দেওয়া হবে না বলেও প্রকাশ্য ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। আমি লিখিত ভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। অনৈতিক পক্রিয়ায় ভোট কারচুপির চেষ্টা হলে জনগন প্রতিহত করবেন। অনাকাংখিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সংসদ সদস্য টুকুই দায়ী হবেন।
নৌকার প্রার্থী ও টুকুপুত্র আসিফ শামস রঞ্জন বলেন, আমার চাচা আব্দুল বাতেন দূর্নীতি অনিয়মের কারনে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের লালন করেন। অপকর্মের কারনে দল তাকে মনোনয়ন দেননি। নৌকার বিরোধিতাকারীদের সাথে কোন রক্তের সম্পর্ক থাকতে পারে না।
জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও বেড়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, আচরণ বিধি অনুযায়ী সংসদ সদস্য পর্যায়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুকে এই বিধান মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে এলাকা ত্যাগ করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নির্বাচন বিধান সম্পর্কে আমি অবহিত। আমি আচরণ বিধি লংঘন করিনি, করার ইচ্ছেও নেই।
Leave a Reply