পাবনার বেড়ায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবাধে ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। প্রশাসনের নাকের ডগায় নৌ পুলিশকে উৎকোচ দিয়ে পদ্মা ও যমুনা নদীতে মা ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। অনুসন্ধানেও মিলেছে নৌ পুলিশের চাঁদাবাজির চিত্র। তবে, জেলেরা জানান, সরকারি ভাবে নিষেধাজ্ঞার সময়ে পাবনায় জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান বা ভাতার ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই মাছ ধরছেন তারা। তবে, শিকার মাছ থেকে আয়ের বেশির ভাগই দিয়ে দিতে হচ্ছে নৌ পুলিশকে।
মৎস বিভাগ জানায়, গত ৭ই অক্টেবর থেকে ২৮ অক্টেবর পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ আহরণ,পরিবহন,মুজুদ বাজারজাতকরণ ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দন্ডনীয় অপরাধ ঘোষণা করেছে সরকার।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী বেড়া উপজেলায় তালিকাভূক্ত মৎস্যজীবির সংখ্যা তিন হাজার ছয় শ ৩৪ জন। তবে উপজেলার কয়েকটি মৎস্যজীবি সমিতির হিসাব অনুযায়ী এই সংখ্যা পাঁচ হাজারেরও বেশি। উপজেলার দশটি ইউনিয়নের বেড়া পৌরসভা, হাটুরিয়া-নাকালিয়া, মাছখালি, ঘিওর, রাকশা, নগরবাড়ী এলাকা অনেক মৎসজীবি পরিবার রয়েছে যারা কেবলই মাছ আহরণ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের বিকল্প কোন আয়ের উৎস নেই। ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুমে ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে এ সময় মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। মৌসুম শুরুর আগেই বেশিরভাগ জেলে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে জাল কেনে। কিন্তু এই সময়ে আয় না থাকলেও তাদের কিস্তির টাকা শোধ করতে হয়।
এদিকে, মাছ ধরা ও বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেড়া উপজেলার কয়েক হাজার মৎস্যজীবী পরিবার নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। ইলিশ ধরা নিষিদ্ধকালে সরকার দেশের বিভিন্ন এলাকার জেলেদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিকল্প কর্মসংস্থান ও সহায়তা করলেও বেড়া উপজেলার জেলেদের জন্য এ ধরনের কোনো বরাদ্দ নেই বলে জানায় মৎস্য অফিস। সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে অনেক জেলেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ ধরতে নদীতে নামছে।
জেলেদের অসহায়ত্বের সুযোগে একটি দালাল চক্র উপজেলার নগরবাড়ির নৌ-পুলিশের সাথে সমন্বয় করে জেলেদের নদীতে মাছ ধরার অনুমতি দেয়ার নামে ৪ থেকে ৫ হাজার করে টাকা নিচ্ছেন। কিন্তু সব জেলেই আবার এ অনুমোদন পাচ্ছে না। আবার যে সকল জেলেরা নৌ-পুলিশের অগোচরে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে তাদের আবার ৫ থেেেক ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছেন নগরবাড়ি নৌ-পুলিশ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও নৌ পুলিশ সদস্যদের নৌকাপ্রতি নির্ধারিত হারে উৎকোচ দিয়ে নদীতে মাছ ধরার ধরছেন জেলেরা।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে নটাখোলা ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, উৎসব মূখর পরিবেশে হচ্ছে মা ইলিশ। ৭শত থেকে ৯শত গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬শত টাকা থেকে ৭শত টাকা দরে। আর ছোট সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪ শত টাকা থেকে সাড়ে ৪শত টাক পর্যন্ত। কাজিরহাট এলাকার পাইকান্দি গ্রামে সন্ধায় গিয়ে দেখা যায় আর এক ভয়াবহ চিত্র সেখানে হাঁক ডেকে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। বিক্রেতারা ক্রেতাদের বলছেন কোন সাইজের মাছ লাগবে চলেন দেখাই্ এরপর বিক্রেতারা তাদের বাড়িতে বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা মাছ দরদাম করে বিক্রি করছেন।
শনিবার গণমাধ্যমকর্মীরা পরিচয় গোপন রেখে এক দালালের মাধ্যমে জেলেদের মাছ ধরার অনুমতির সুযোগ চাইলে নৌ-পুলিশের মুন্সী ল্ইাজু বলেন, মাছ ধরার অনুমতি দেয়া যাবে তবে বিষয়টি নিজের বউকেউ বলা যাবে না। নৌকা প্রতি ৬ হাজার করে টাকা লাগবে। যখন আমাদের পুলিশের কেউ বা প্রশাসনের কেউ নদীতে অভিযানে নামার আগেই আমি ফোনে জানিয়ে দিব তারা আধাঘন্টার জন্য সরে থাকবে পরে আবার মাছ ধরবে। এ কথোপকথন এ প্রতিবেদকের কাছে গোপনে ভিডিও ধারণ করা আছে।
তবে, জেলেদের সাথে চুক্তির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নগরবাড়ি নৌ-পুলিশের আইসি শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার নৌ-পুলিশের কোন কর্মকর্তা অনৈতিক কোন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নয়। মা ইলিশ রক্ষার্থে দিনরাত আমরা অক্লান্ত প্ররিশ্রম করে যাচ্ছি। মুন্সী লাইজুর ভিডিও থাকার বিষয়ে জানালে তিনি বলেন, এটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য হতে পারে। আমাদের জানা নেই। এমন কোন অভিযোগও পাইনি।
বেড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ মা ইলিশ সংরক্ষণ নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে প্রতিদিনই আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। পনের দিনে প্রায় চার লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা এসব জেলের জন্য সরকারি সহায়তা চেয়ে বার বার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখে চলেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা. সবুর আলী জানান, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের শুরু থেকেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৬ টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৫৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। নৌ পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান এ বিষয়ে কোন তথ্য প্রমাণ পেলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হবে।
Leave a Reply