অবশেষে ব্যাপক সমালেঅচনার মুখে পাবনার বেড়ায় প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে অবৈধ লটারি বাণিজ্য বন্ধ করতে বাধ্য হলেন বেড়া পৌর মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন। বুধবার বিকেলে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে লটারীর টিকেট বিক্রির গাড়ি ও সরঞ্জামাদি সরিয়ে নেন আয়োজকরা। গত ১৮ অক্টোবর পাবনার বহুল প্রচারিত দৈনিক পাবনা প্রতিদিন ও অনলাইন গণমাধ্যম পাবনামেইল টোয়েন্টিফোর ডটকম এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়।
স্থানীয়রা জানান, বেড়া পৌর ক্রীড়া উন্নয়ন সংস্থার নামের ভুঁইফোড় একটি সংগঠনের ব্যানারে প্রধানমন্ত্রীর ৭৬ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে মেয়র গোল্ডকাপ আন্তঃজেলা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করেন বেড়া পৌর মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের পেছনে মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তরুণ সমাজকে যুক্ত করার মহৎ উদ্দেশ্য প্রচার করা হয়। তবে, গত কয়েকদিন ধরে টুর্নামেন্টের আড়ালে অবৈধ লটারী বাণিজ্য শুরু করেন আয়োজকরা। এ ধরণের লটারি পরিচালনায় প্রশাসনের কোন অনুমোদন ছিল না বলেও নিশ্চিত করেন বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলী।
গত কয়েকদিন ধরে বেড়া-সাঁথিয়া চটকদার সব বিজ্ঞাপন প্রচার করে এবং মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন রকম পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে অটো ভ্যানে চলছে লটারির টিকেট বিক্রি করেন বেড়া পৌর মেয়রের অনুসারীরা।
মাইকে এসব লোভনীয় বিজ্ঞাপন শুনে লটারি কিনতে পিকআপ, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে থাকা লটারি বিক্রেতাদের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়েন বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষরা। কেউ কেউ ২০ টাকা মূল্যের এই লটারি ৪ থেকে ৫ টিও ক্রয় করেন।
স্থানীয়রা জানান, চটকদার এসব বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে মোটরসাইকেল, সাইকেল, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন রকম পুরস্কার পাওয়ার আশায় গ্রামের নিরীহ নারী পুরুষ এই লটারি ক্রয় করেন। এভাবেই র্যাফেল ড্র এর নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে গত কয়েকদিনে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন মেলার আয়োজক ও র্যাফেল ড্র সংশ্লিষ্টরা।
ফটকাবাজি এই লটারির ব্যবসা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক পাবনা প্রতিদিন ও পাবনামেইল টোয়েন্টিফোর ডটকম।
জানা যায়, বেড়া মেয়র আসিফ শামস রঞ্জনের সাথে একটা চুক্তির মাধ্যমে লটারি খেলা চালাচ্ছিলেন। র্যাফেল ড্র এর লটারি বিক্রি টাকার ভাগ মেলার আয়োজক ও লটারি কোম্পানি ভাগাভাগি করে নেন।
এ বিষয়ে সব জেনেও স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিরব থাকার অভিযোগ ওঠে। সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। বুধবার মৌখিক নির্দেশেই ফুটবল টুর্নামেন্টের নামে অবৈধ লটারী বানিজ্য বন্ধ করে দেন বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলী।
তিনি জানান, যে কোন লটারী পরিচালনার জন্য বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। আমাদের অজ্ঞাতসারে খেলার আড়ালে লটারি পরিচালনা করছিল একটি মহল। বিষয়টি জানার পর আমরা খোজ খবর নিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছি।
এ বিষয়ে কথা বলতে টুর্নামেন্ট আয়োজক বেড়া পৌর মেয়র আসিফ শামস রঞ্জনের মুঠোফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে লটারী পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক লুৎফর রহমান জানান, কয়েকদিন লটারী চালালেও বুধবার সকাল থেকে টিকেট বিক্রি বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। মেয়র সাহেবকে বলার পরেও তিনি অনুমোদন নিতে না পারায় আমি বিকেলে টাঙ্গাইল চলে এসেছি।
Leave a Reply