রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
অফিস অটোমেশন সিষ্টেমের উদ্বোধন, কাগজবিহীন অফিস হতে চলেছে পাবিপ্রবি বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে পাবিপ্রবিতে আলোচনা সভা পাবিপ্রবিতে প্রথমবর্ষের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার সকল আয়োজন সম্পন্ন আন-নাসর রমাদান কুইজ ও কর্জে হাসানা কার্যক্রম শুরু পাবনায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নতুন বর্ষবরণ রূপপুর প্রকল্পের গাড়ি চালক সম্রাট হত্যা মামলার মূলহোতা মমিন গ্রেফতার নিখোঁজের দুইদিন পর রূপপুর প্রকল্পের গাড়িচালকের মরদেহ উদ্ধার বাউয়েট এ, “সরকারী খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রম” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত নিখোঁজের দুইদিন পর যমুনা নদী থেকে কিশোরের বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার চরতারাপুরে বালু মহলে পুলিশের ওপর চেয়ারম্যানের লোকজনের হামলা, সরঞ্জাম জব্দ

ভারতে বসবাস, চাকুরী করেন বাংলাদেশে! কৌশলে নেন বেতন

বিশেষ প্রতিবেদক, পাবনামেইল টোয়েন্টিফোর ডটকম
  • প্রকাশিত রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০২২
Pabnamail24

প্রায় ৫ বছর আগে বসবাসের উদ্দেশ্যে ভারতে যাতায়াত করছেন এবং বাড়ি করে বসবাস শুরু করেছেন। আর গত ১ বছর ধরে কোন প্রকার হাজিরাই দিচ্ছেন না প্রতিষ্ঠানে। স্ত্রী সন্তানসহ সপরিবারে বসবাস করছেন ভারতের কলকাতায়। অথচ বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সকল সুবিধাই ভোগ করে চলেছেন পাবনার বেড়া উপজেলার মাশুন্দিয়া-ভবানীপুর কে.জে.বি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বনাথ দত্ত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মন্নাফ সরকার বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গণিত বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বনাথ দত্ত প্রায় ৫ বছর আগে সপরিবারে ভারতে চলে যান। মাঝেমধ্যে তিনি ভারত থেকে দেশে এসে কলেজে হাজিরা দিয়ে যান। তবে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে গত প্রায় ১ বছরের অধিক সময় ধরে বিনা ছুটিতে ভারতে অবস্থান করায় তার স্বাক্ষর জাল করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম বিশ্বাস ও বিশ্বনাথ দত্তের ভাই সুনিল দত্তের যোগসাজসে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন।

বিশ্বনাথ দত্তের চাকরীর ইনডেক্স নং-৪০৩৩৮৪, সোনালী ব্যাংক, বেড়া শাখা, পাবনার ব্যাংক হিসাব নং-০০২০৬৩২৫১। যা ব্যাংকে গিয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা মিলেছে।

লিখিত অভিযোগের অনুলিপি থেকে জানা যায়, বিশ্বনাথ দত্ত তার বড় ভাই সুনিল দত্তের কাছে ব্যাংকের চেকবই স্বাক্ষর করে রেখে গেছেন। প্রতি মাসে বেতন বইতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজেই বিশ্বনাথ দত্তের নামের ঘরে স্বাক্ষর করে বেতন ব্যাংক হিসাবে জমা করার পরে বিশ্বনাথ দত্তের ভাই সুনিল দত্তকে দিয়ে ব্যাংক থেকে সমুদয় টাকা (মাসিক ৪০,৩৫৩/-) উত্তোলন করিয়ে নিয়ে অর্ধেক টাকা নিজেই নিয়ে নেন। এছাড়া কলেজ অংশের মাসিক বেতনের (১৯৪৮/-) পুরোটাই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম বিশ্বাস জাল স্বাক্ষর করে আত্মসাৎ করেন। বেতনের অর্থ গ্রহণের বিনিময়ে ভারতে অবস্থান করেও বাংলাদেশে চাকরী করাকে এককভাবে জায়েজ করে দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

কোনো কাজ না করেই বেতনভাতা তুলে নিচ্ছেন বছরের পর বছর। ভোগ করছেন সরকারের উৎসবভাতা ও বোনাসসহ অন্যান্য সুবিধাদি। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অভিযোগকারী শিক্ষক মন্নাফ সরকারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পুরো ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিশ্বনাথ দত্ত বহুদিন ধরে সপরিবারে ভারতে থাকেন। একবছর হলো সে কলেজে আসে না। অথচ কলেজ থেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন নিয়মিত। হাজিরা খাতায় লাল কালি দিয়ে অনুপস্থিত লেখা আছে। তিনি বিভিন্ন অজুহাতে অনুপস্থিত দেখায় প্রায় এক বছর। বিশ্বনাথ দত্তের বেতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম বিশ্বাস নিজেই তার স্বাক্ষর দিয়ে দেন। আর আমরা শুনেছি বিশ্বনাথের ভাইয়ের কাছে সোনালী ব্যাংকের চেক বইয়ে স্বাক্ষর করে রেখে গেছেন এবং সে নাকি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন।’

অভিযোগের বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম বিশ্বাসের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বিভিন্ন অজুহাতে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে রাজী হননি। একবার ফোন রিসিভ করে বলেন, আমি মিটিংয়ে আছি পরে কথা বলছি। পরে ফোন দিলে বলেন, আমি গাড়িতে আছি পরে কথা বলছি। অনেকবার চেষ্টার পরও সে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে আগ্রহী হননি। তবে তার পক্ষে সুপারিশের জন্য স্থানীয় কয়েকজন নেতা এ প্রতিবেদককে মুঠেফোনে প্রতিবেদন না করার কথা বলেন।

সোনালী ব্যাংক বেড়া শাখায় সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিশ্বনাথ দত্তের প্রতি মাসের বেতন প্রতি মাসেই একাউন্টে জমা হচ্ছে এবং তা উত্তোলনও হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি আব্দুল আজিজ খানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ঐ কলেজের নতুন সভাপতি হয়েছি। তবে আমি বিশ্বনাথের বিষয়ে শুনেছি তিনি অসুস্থতার অজুহাতে ভারতে থাকেন। আমি সভাপতি হবার পর কলেজে তিন চারটি মিটিং করেছি। তার সাথে আমার একবারও দেখা হয়নি। এবার আমি কলেজে লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়ে ১৫ আগস্ট তাকে উপস্থিত থাকার কথা বলেছি। এর আগেই আমি মিটিং কল করব। এরপরেও ১৫ আগস্টে যদি উপস্থিত না হন তাহলে আমি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব এবং যারা তাকে এই অবৈধকাজে সহায়তা করছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি বিশ্বনাথ দত্তের ভাইকে দিয়ে তার বেতন উত্তোলন করছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কলেজের কয়েকজন শিক্ষক জানান, ‘কলেজের অধ্যক্ষ এবং গভর্নিং বডির সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়া তো বেতনই হয় না। তাহলে কিভাবে এতদিন বিশ্বনাথ দত্তের বেতন হয়? এই দুর্নীতিতে সবারই হাত আছে। এরচেয়েও বড় বিষয় হল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কোন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এক বছরের বেশি থাকার নিয়ম নেই। অথচ কোন শক্তির জোরে আব্দুস ছালাম বিশ্বাস বিগত তিন বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন?’

এ বিষয়ে জানার জন্য অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক বিশ্বনাথ দত্ত ও তার ভাই সুনিল দত্তের সঙ্গে কোনভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বেড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খবির উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা ছিল না। তবে কলেজে ছুটিছাড়া বহুদিন কলেজে অনুপস্থিত থেকে তিনি বেতন তুলতে পারেন না। এক বছর তো ছুটিতে থাকতেই পারেন না। আর মেডিকেল ছুটি নিলেও তো বেতন নিতে পারবেন না। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

বেড়া উপজেলা নির্বার্হী অফিসার মোহা. সবুর আলী জানান, ‘এবিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এটা কোন নিয়মের মধ্যে পরে না। অভিযোগ বা কোন পত্র পত্রিকায় এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে তদন্ত করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

শেয়ার করুন

বিভাগের আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!