পাবনার বেড়া উপজেলার বৃশালিখা কোল ঘাট দখলকে কেন্দ্রকে করে স্থানীয় সাংসদ শামসুল হক টুকুর পুত্র আসিফ শামস রঞ্জন ও ভাই আব্দুল বাতেনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় দশ বছর আগে বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখায় হুরাসাগর নদী তীরে অবৈধ নৌবন্দর গড়ে তোলেন তৎকালীন পৌর মেয়র ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর ভাই তৎকালীন পৌর মেয়র আব্দুল বাতেন। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টির সত্যতা পেয়ে তা উচ্ছেদ করে বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তীতে বিআইডব্লিউটিএর সাথে মধ্যস্থতা করে আবারও ঘাটটি চালু করেন আব্দুল বাতেন। নৌ বন্দরের পাশে শতাধিক দোকান ঘর নির্মান করে নিজ অনুসারীদের বানিজ্য করার জন্য দোকান ঘর বরাদ্দ দেন বাতেন।
তবে, সর্বশেষ পৌর নির্বাচনে আব্দুল বাতেন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হন। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে মেয়র নির্বাচিত হন সাংসদ শামসুল হক টুকুর ছেলে আসিফ শামস রঞ্জন। ভাতিজার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে যান আব্দুল বাতেন। তবে, নির্বাচন ঘিরে দ্বন্দ্বে আব্দুল বাতেনের সাথে সম্পর্কের চরম অবনতি হয় সাংসদ টুকু ও তার ছেলেদের। অতীতে আব্দুল বাতেনকে দিয়ে এলাকার সকল ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করলেও। মেয়র নির্বাচিত হবার পর সাংসদ টুকুর সমর্থনে তা দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে তার পুত্র পৌর মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন ও তার সমর্থকরা। এর জেরে বৃশালিখা ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বাতেন সমর্থকদের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেয়। বৃহঃস্পতিবার বাতেন সমর্থকরা স্থানীয়দের সাথে নিয়ে তালা ভেঙে নিজেদের দোকান খুলতে গেলে রঞ্জন সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে। বিক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশের গাড়িতে হামলা করে কাঁচ ভেঙে দেয়। এ সময় ৫ পুলিশসহ গ্রামের প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন আহত হয়। এর মধ্যে আহত কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানকে বেড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত তিন প্লাটুন পুলিশ এসে বৃশালিখা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, সাবেক মেয়র আব্দুল বাতেন ও বর্তমান মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। সম্প্রতি পৌরসভার নির্বাচন থেকেই তাদের চাচা ও ভাতিজার মধ্যে ঝামেলার সূত্রপাত শুরু হয়। সেই ঝামেলার অংশ হিসাবে বৃহঃস্পতিবার দুপুরে বৃশালিখা ঘাট এলাকায় দোকানপাট দখলকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ মুখোমুখি সংষর্ষে লিপ্ত হন। পুলিশ ফোর্স দ্রুত সেখানে গাড়ি নিয়ে পৌছালে সেখান সাবেক মেয়র বাতেন গ্রুপের সমর্থকেরা আমাদের পুলিশের গাড়ির উপরে হামলা করেন। ঘটনায় আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের উপর হামলা মামলা দায়ের হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে সাবেক মেয়র আব্দুল বাতেন ও বর্তমান মেয়র রঞ্জনের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। এই ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক স্বারাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পাবনা বেড়া-১ আসনের বতর্মান সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যাক্তিগত মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে, ঘটনার পর বৃশালিখা গ্রামে পুলিশী অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গ্রামবাসীর মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পুরুষেরা ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি না করতে পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
Leave a Reply