পাবনার বেড়া উপজেলার বৃশালিখা গ্রামে সূর্যমূখী চাষে সাড়া ফেলেছেন তরুন উদ্যোক্তা আলভী। প্রতিদিনই তার বাগানে ভীড় করছেন দর্শনার্থীরা।
সূর্যমুখী ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য মোহিত করে তুলেছে ভ্রমণ পিপাসু সাধারণ মানুষকে। আলভী সজীব নামের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েশন করা এক তরুন উদ্দোক্তা দুই বিঘা জমিতে সূর্যমুখী বাগান করেছেন।
জানা যায়, সেখানে প্রতিদিন সকাল বিকাল বিভিন্ন উপজেলা ও এলাকার নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। তাদের কেউ প্রিয়জনের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। কেউ আবার ফুলের সৌন্দর্যের সঙ্গে আনন্দঘন মুহূর্তকে মোবাইলফোনের ক্যামেরায় বন্দি করে রাখছেন। সব মিলিয়ে ফুলের সৌন্দর্যে পর্যটকেরা যেন ক্ষণিকের জন্যে হারিয়ে যাচ্ছেন এক অপার্থিব আনন্দলোকে। মূলত দর্শনার্থীরা বেশির ভাগই সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে অনেকের ছবি পোস্ট দেখে এবং সবার মুখে শুনে সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখে ভীড় জমাচ্ছেন। তার সাথে বাড়তি বিনোদন দান করেছে এই উদ্দোক্তার নেয়া পদক্ষেপ,বাগানের ভিতরে দর্শনার্থীদের জন্য ছবি তোলা ও সাময়িক বিশ্রামের জন্য কয়েকটা বসার ব্যবস্থা ও ভালবাসার প্রতীক-লাভ আকৃতির ফটোসেশান জোন এবং উঁচু ওয়াচ-টাওয়ার।
এদিকে উদ্দোক্তা বলছেন অল্প পুঁজিতে সূর্যমুখী চাষে অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা। কৃষি বিভাগ বলছে আগামীদিনে ভালো ফলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে,যাতে বাংলাদেশ ভোজ্য তেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশেই থাকবে।
স্থানীয়রা জানান, বেড়া উপজেলার বৃশালিখা গ্রামে সূর্যের মতো হাঁসি দেওয়া হলুদ গালিচা ছড়ানো ফুলের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে প্রতিদিন বাগানে ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকরা। তাদের কেউ মোবাইলফোনের ক্যামেরায় নিজেদের সেলফি তুলছেন। কেউ আবার প্রিয় মুহূর্তকে মোবাইলফোনের ভিডিওতে স্মৃতি হিসেবে ধারণ করে রাখছেন।
গত সোমবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে বাগানটি দেখতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, এখানে আসার পর দেখলাম জায়গাটি খুব সুন্দর। ফুল দেখে খুব ভাল লেগেছে। এখানে ঘুরতে এলে মানুষের একটু হলেও ভালো লাগবে। এই ফুল থেকে আবার তেল তৈরি হয়। এই তেল খুব দামী। অনেকেই মনে করছেন কৃষকদের উচিত বেশি বেশি করে সূর্যমুখী চাষ করা। অনেকেই সপরিবার নিয়ে বাগাটি দেখতে আসা স্বজল নামের একজন বলেন, আমরাদের বাগানটি দেখতে এসে খুব ভালো লেগেছে।
বাগান মালিক আলভী সজীব জানান,করোনা কালিন সময় অবসর বসে না থেকে কিছু করা প্রয়োজন ও মানুষকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে,বিনোদনের একটু সুন্দর জায়গা করে দিতে, এরই পেক্ষাক্রমে গতবছর এবং এবার এই সূর্যমুখী চাষ করি। দেশে ভোজ্য তেলের ঘাড়তি ও বিদেশ থেকে তেল আমদানিতে সরকারকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয় যা প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকার মতো,তাই দেশের স্বার্থে একটু হলেও আমি কিছু করতে চাই, এখানে গতবছর ২৮ শতাংশ জায়গায় আমরা প্রথমবারের মতো পরিক্ষামূলক সূর্যমূখী চাষ করেছিলাম। ভালো ফলন ও প্রচুর জনসমাগম হয়েছিলো সেই সাথে লাভবান হয়েছিলাম। তারই এ বছর প্রায় দুই বিঘা নিয়ে বাগান করেছি। আমার জানা মতে পাবনা জেলার ২য় বৃহত্তম সূর্যমুখী বাগান এটা। তিনি আরও জানান, জমি চাষে আমাদের প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে অনেক ফুল এখন গাছে আছে তা দিয়ে আশা করছি লাভবান হতে পারবো। এককানি (৩০ শতাংশ) জমিতে সরিষা চাষ করলে যেমন তেল হয় সূর্যমুখীতেও তাই হবে কিন্তু সূর্যমুখীর খরচ কম ও রোগবালাই কম হয়। এই তেলের দামও বেশি। এতে আমি সবার উৎসাহ পাচ্ছি পরের বছর আরও বড় পরিসরে চাষ করবো ও জায়গার পরিমাণ বাড়াবো। সেই সাথে স্ট্রবেরি ও ক্যাপসিকাম চাষ করবো এটা আমার আশা।
এই তরুন উদ্দোক্তার দেখানো সূর্যমুখীর বাগান ও লাভের সম্ভাবনা দেখে আশেপাশের আরও অনেকেই চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছে। ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আগামী দিনে উন্নত জাতের সূর্যমুখী চাষাবাদের পরিকল্পনার কথা সেই সাথে সূর্যমুখী ফুল চাষ করতে কৃষকদেরও আগ্রহী করছেন বলে তিনি জানান।একের মধ্যে দুই-বাগান যখন বিনোদন কেন্দ্র।
বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত কবীর বলেন, সূর্যমুখি মূলত একটি লাভজনক ফসল এটির তেল খুবই স্বাস্থ্য সম্মত উৎপাদন খরচও কম। সরকার চাষিদের সূর্যমুখি চাষে উৎসাহীত করতে পরামর্শ ও প্রনোদনা দিয়ে যাচ্ছে। এ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখি চাষের উপযোগী হওয়ায় পরবর্তী মৌসুমে অন্যান্যরা সূর্যমুখি চাষের দিকে ঝুকে পড়বেন তিনি আশা করেন।
Leave a Reply