অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ, সংঘাত সহিংসতার আশংকার মাঝেই বুধবার পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ । সকাল ৮টা থেকে ব্যালট পেপারে শুরু হবে ভোটগ্রহণ, বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ করতে প্রশাসন কড় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিলেও, আতঙ্ক কাটছে না স্থানীয়দের।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, ভাঁড়ারা ইউপিতে ৩৮ হাজার ২শ ৫৭ জন ভোটারের মধ্যে নারী ভোটার ১৮ হাজার ২৯৩ জন এবং পুরুষ ভোটার ১৯ হাজার ৯৬৪ জন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদন্দ্বিতা করছেন ২ জন প্রার্থী। আর ৯টি সাধারণ ও ৩টি সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫৩ জন, এর মধ্য নারী সদস্য পদে ১৩ জন এবং পুরুষ সদস্য পদে ৪০ জন প্রার্থী। এই ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৬টি, বুথ রয়েছে ১০৪টি। সবগুলো কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ ধরে প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন ১৪ জন করে।
জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আবু সাইদ খান ও প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সুলতান খানের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। উভয় পক্ষের সমর্থকদের দ্বন্দ্বে গত ৬ বছরে ঘটেছে একাধিক হত্যাকান্ড, বাড়ি ঘরে লুটপাট অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এই দুই ব্যক্তিকে ঘিরে বিভক্ত ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীকরাও। নির্বাচনী প্রচারণায় উভয় প্রার্থীই নির্বাচনে মাঠে কোন ছাড় দেয়া হবেনা বলে বক্তব্য দিয়েছেন। ভোট কারচুপির চেষ্টা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে মাঠের বক্তব্যের কড়া আলাপে উত্তপ্ত ভাঁড়ারার রাজনীতির মাঠ। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সকল প্রস্ততি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কর্মকতা ও আইন শৃংখলা বাহিনী।
পাবনার পুলিশ সুপারের তদারকিতে শুধুমাত্র এই ইউনিয়নেই দায়িত্ব পালন করবে ৪ জন এডিশনাল এসপির নেতৃত্বে ৪টি সেক্টর টিম। ২ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ২টি টিম, ফায়ার সার্ভিসের ২টি টিম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১১ জন, ১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মোবাইল টিম ১৬টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ৮টি, চেকপোস্ট ৪টা, সিটিইউটি টিম থাকবে ২টা। এছাড়াও ১২ জনের একটি রিজার্ভ টিম রাখা হয়েছে। সবমিলিয়ে ৫ শতাধিক আইনশৃঙ্লা বাহিনীর সদস্য এই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন।
পাবনা সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা কায়সার মোহাম্মদ বলেন, নির্বাচনটি শান্তিপুর্ণ ও সুষ্ঠু করতে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। এর আগে একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য এতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বলতে গেলে ৩-৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে শুধু এই ইউনিয়ন ঘিরে।
পাবনা পুলিশ সুপার (এসপি) মহিবুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পুলিশের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে যা যা করণীয় তাই তাই করবে প্রশাসন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণার সময় পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু সাঈদ খান (৫২) ওরফে সাঈদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম (৩৫) নিহত হন। এঘটনায় ওই বছরের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের সব (চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য, সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য) পদের নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। পরে গত ২৮ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন থেকে ১৫ জুন ভোটগ্রণের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করা হয়।
„
Leave a Reply