পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ নাসিম (১৭) নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। সোমবার রাতে নিহতের বাবা নায়েব আলী ও আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র ( আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী) প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দুটি করেন।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নায়েব আলী মামলার আরজিতে উল্লেখ করেছেন, ‘তার ছেলে বাজারে ওষুধ কিনতে গিয়েছিল। সেখানে দু’ প্রার্থীর নির্বাচনী সংঘাত চলাকালে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করার সময় তিন-চারজন অজ্ঞাতনামা নাসিমকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।’ এ ঘটনায় তিনি সব আসামিদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
প্রচারণায় হামলার অভিযোগে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান খানের ভাই রহমত আলী বাদী হয়ে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে সোমবার রাতে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। তারাবাড়িয়ায় সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে সোমবার রাতে আটক হওয়া কুতুবউদ্দিন ও আব্দুল মতিনকে মামলায় অভিযুক্ত করায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে, মঙ্গলবার সকালে ময়না তদন্ত শেষে নিহত নাসিমের মরদেহ স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করে পুলিশ। বাদ জোহর তারাবাড়িয়া খাপড়াডাঙ্গী গোরস্থানে জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহতের পিতা নায়েব আলী।
তিনি বলেন, জানি বিচার পাবো না। আমার মতো দরিদ্র অসহায় মানুষের পক্ষে কেউ থাকবেনা। পুলিশ বলেছে তাই মামলা করেছি। আমার যা হারিয়েছে তা কেউ ফেরত দিতে পারবে না।
‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমার প্রচারণায় বাধা দিতে নৌকার প্রার্থীর পক্ষ হয়ে সুজানগর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রাজু ও সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাতিজা সুজানগর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সোহাগের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। সে ঘটনার ছবি তোলায় সোহাগ নিজেই পেছন থেকে চাকু মেরে নাসিমকে হত্যা করেছে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে এসে নিরপত্তার আশ^াস দিয়েছেন। আশা করছি সন্ত্রাসীরা দ্রুত আইনের আওতায় আসবে।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রোকনুজ্জামান সরকার বলেন, পাবনা সদরের দুর্গম চরাঞ্চলের দুই ইউনিয়ন ভাঁড়ারা ও চরতারাপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কলেজ ছাত্র নিহত হওয়ায় পুলিশী নিরপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দায়ের হওয়া মামলা গুলোর আসামীদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা চলছে।
ভাঁড়ারায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন হত্যা মামলায় নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানসহ ৩৪ আসামীর নামে মামলা হয়েছে। আবু সাঈদ খানের ভাতিজা শুভ, অনুসারী মানিকসহ ৬ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রধান আসামী আবু সাঈদকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
আগামী ২৬ ডিসেম্বর পাবনা সদরের ১০টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে, ভাঁড়ারা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াসিন নিহত হওয়ায় ঐ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
Leave a Reply