পাবনায় গণপূর্ত বিভাগে ঠিকাদারদের অস্ত্রের মহড়ার পর প্রভাবশালী এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কার্যালয়ে ঢুকে মারধোরের অভিযোগ করেছেন এক প্রকৌশলী। সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে গণপূর্ত ভবনে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একই দিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ঐ প্রকৌশলী।
পাবনা গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেবাশীষ চন্দ্র সাহা জানান, রবিবার দুপুরে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঠিকাদার নূর কনসট্রাকশনের মালিক মোখলেসুর রহমান নয়ন নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের কক্ষে উপ সহকারী বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তারের সাথে ঠিকাদারী কাজ নিয়ে কথা বলতে আসেন। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলী তার কক্ষে ছিলেন না।
আব্দুস সাত্তার ঠিকাদার নয়নকে নির্ধারিত সময়ে সঠিকভাবে কাজ শেষ করার তাগিদ দিলে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে কিল ঘুষি ও লাথি মারতে শুরু করেন। আব্দুস সাত্তারের চিৎকারে অফিসের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন। এ সময় অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করতে করতে ঠিকাদার নয়ন অফিস থেকে বের হয়ে যান।
দেবাশীষ চন্দ্র সাহা আরো জানান, আব্দুস সাত্তারের নিকট থেকে আমরা ঘটনার বিষয়ে জেনেছি। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনাটি অনভিপ্রেত এবং চরম অপমানজনক মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমরা নিরপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণপূর্ত বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ঠিকাদার মোকলেসুর রহমান নয়ন এক সময় বেকার ভবঘুরে ছিলো। গণপূর্ত বিভাগের এক সিন্ডিকেটের সহায়তায় হিসেবে কাজ করেন তিনি। তার মধ্যস্থতায় নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের সাথে যোগসাজশ করে গণপূর্ত বিভাগের কাজ বাগিয়ে নিয়ে গত কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী একাধিকবার নয়নের সাথে অবকাশ যাপন কেন্দ্রে বেড়াতে যান। নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে তার ঘনিষ্ঠতার সুযোগে ঠিকাদার নয়ন গণপূর্ত বিভাগের সকল কমকর্তা- কর্মচারীদের সাথে দূর্বব্যবহার করেন। নয়ন ও নির্বাহী প্রকৌশলীর অনৈতিক দাবী মেটাতে রাজী না হওয়ায় তাকে নিজ অফিসেই লাঞ্ছিত হতে হল।
এদিকে, লাঞ্ছনার ঘটনায় রবিবার সন্ধ্যায় ঠিকাদার নয়নের বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগী উপ সহকারী বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার। এ সময় তাকে আহত, বিধ্বস্ত ও আতংকিত অবস্থায় খুড়িয়ে গাড়িতে উঠতে দেখা যায়। ঘটনার বিষয়ে তিনি জানান, নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে ঠিকাদার নয়নকে তার অসমাপ্ত কিছু কাজ নিয়মমাফিক শেষ করতে বলি। এ সময় হঠাৎ তিনি উত্তেজিত হয়ে গালাগাল শুরু করেন। আমি প্রতিবাদ জানালে মারপিট শুরু করেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি স্তম্ভিত হয়ে পড়ি। নিজ অফিসে এমন অপমানিত হব কখনো কল্পনাও করিনি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম বলেন, আব্দুস সাত্তারকে মারপিটের কথা শুনেই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। নয়নের সাথে আমার কোন ঘনিষ্ঠতা নেই। সে গণপূর্ত বিভাগের একজন ঠিকাদার মাত্র। অসাধু সিন্ডিকেটের কথামতো কাজ না করায় আমাকে জড়িয়ে অসত্য অভিযোগ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ঠিকাদার মোখলেসুর রহমান নয়নের মুঠোফোনে বার বার ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি। শহরের ছাতিয়ানি এলাকায় তার বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি।
পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ভুক্তভগেী প্রকৌশলী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। গণপূর্ত বিভাগ চাইলে নিরপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।
Leave a Reply