পাবনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গণকবর সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াসী নাগরিক সমাজ।
মঙ্গলবার সকালে শহরের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের সামনে থেকে একটি মৌন মিছিল নিয়ে ঐতিহাসিক সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্র পুরাতন টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনের সামনে মানববন্ধনে মিলিত হন তারা।
ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, পৌর মেয়র শরিফ উদ্দিন প্রধান, সাবেক ছাত্রনেতা আনিসুজ্জামান দোলন সহ আরো অনেকে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, একাত্তরের মার্চে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই পাবনা আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা ঘাঁটি গাড়ে পুরাতন টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবন ও বিসিক শিল্পনগরীতে। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে শুরু করে হত্যাযজ্ঞ। শেখ মুজিবর রহমানের নির্দেশে প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী ও মুক্তিকামী জনতা। ২৭ থেকে ২৯ মার্চ চলে টানা তিনদিন যুদ্ধের সকল পাকিস্তানী সেনা হত্যা করে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবন দখলে নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। এরপর, দেশের প্রথম মুক্তাঞ্চল হিসেবে ২৯শে মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত শত্রুমুক্ত ছিলো পাবনা।
পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে দ্বিতীয় দফায় শক্তি বৃদ্ধি করে ১০ মে পাবনায় আসে পাকিস্তানি সেনারা। গ্রামে গ্রামে চালায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। সেসব বর্বরতার আজও সাক্ষ্য বহন করছে গণকবর ও বধ্যভূমি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত স্থানগুলো। তবে, সংরক্ষণের উদ্যোগ না থাকায় এসব স্মৃতি অনেকটাই বিস্মৃতির অতলে।
গৌরবময় সে স্মৃতির টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবন এখন পরিত্যক্ত। পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আখড়া। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। অবিলম্বে ভবনটি সংস্কার করে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর স্থাপনের দাবি জানান তারা।
মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মুক্তিযুদ্ধে পাবনার গৌরবময় স্থান, গণকবর ও সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দেশের শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও আব্দুস সুবহানের নির্দেশে পাবনায় অসংখ্য গণহত্যার ঘটনা ঘটলেও অজ্ঞাত কারণে তার উল্লেখ নেই জেলা প্রশাসনের ওয়েব পোর্টালে। সংক্ষিপ্ত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নেই বীর শহীদদের বীরত্ব গাঁথা।
পাবনা পৌরসভার মেয়র শরীফ উদ্দিন প্রধান বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে নানা উদ্যোগ নিলেও এক্ষেত্রে অনেকটাই অবহেলিত পাবনা। নতুন প্রজন্মের নিকট পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের নৃশংসতা, মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসিকতার বীরত্বগাঁথা তুলে ধরতে পাবনায় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন জরুরী।
Leave a Reply