প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয়েছে পাবনার ইছামতি নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে রবিবার সকালে শহরের কৃষ্ণপুর ও গোপালপুর এলাকায় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয়রা জানান, সকালে শহরের পুরাতন ব্রীজ এলাকায় র্যাব ও পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের যৌথ টিম। এ সময় এস্কেভেটর দিয়ে নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিস বা নির্দেশনা দেয়া হয়নি বলে অনেকে অভিযোগ করলেও তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ সময় ধরে নদী দু’পাড়ে জরিপ করে ১১০০ অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদী পুনরুদ্ধার করা হবে। দখলদারদের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বারংবার নোটিস করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর অনেকে তাদের স্থাপনা সরিয়েও নিয়েছে। যারা তা করেনি, তাদের স্থাপনা ভেঙে দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে, সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত ভাবে কাজ করছেন অভিযানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে, সেখানে বিপুল সংখ্যক উৎসুক মানুষের ভীড় জমে যায়। এ সময় উচ্ছেদ হওয়া স্থাপনার মালিকরা অসন্তোষ প্রকাশ করলেও, স্বাগত জানান সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৭০ এর দশকে পাবনা পৌর এলাকার প্রায় আট কিলোমিটার এলাকায় ছিল ইছামতীর বিস্তার, প্রস্থ ছিল ৯০ থেকে ২০০ ফুট। অথচ অব্যাহত দখলে নদীর প্রস্থ কমে এখন দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৩০ ফুটে। সংস্কারের অভাবে অধিকাংশ এলাকা ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে।
সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দখল হয়েছে নদীর দুই তীর। প্রভাবশালীরা উৎসমুখ ভরাট করে ফেলায় ইছামতী এখন প্রাণহীন বদ্ধ খাল। নদী দখল করে কেউ গড়েছেন পাকা স্থাপনা। বদ্ধ জলাশয়ের দূষিত আর নোংরা পানি পরিণত হয়েছে মশার প্রজনন ক্ষেত্রে।
পরিবেশকর্মীদের আন্দোলন ও স্থানীয় জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে ২০২১ সালের ৩০ মার্চ ইছামতী নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ এবং পানি প্রবাহ সচল করতে নদী পুনঃখনন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। করোনা পরিস্থিতি ও আইনী জটিলতায় এক সপ্তাহের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় উচ্ছেদ অভিযান, বর্ষা মৌসুম চলে আসায় স্থগিত করা হয় খনন কাজও।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে ৫.৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ইছামতির ৫.৬৭ কিলোমিটার এবং এর সঙ্গমস্থলে আরও ২.৬৭ কিলোমিটার ড্রেজিং করার একটি প্রকল্প, পাশাপাশি নদীটিকে দখলমুক্ত করার জন্য ২.৬৯ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প গত বছরের ১৫ মার্চ শুরু হয়েছে।
তবে, দখলদাররা হাইকোর্টে জমির মালিকানা দাবি করে প্রকল্প বন্ধ করতে সাতটি পিটিশন দাখিল করে। এর পরে, ১৭ জানুয়ারি ১ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং প্রকল্প পুনরায় শুরু হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারী থেকে পুনরায় শুরু হলো উচ্ছেদ অভিযান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ইছামতী নদী উদ্ধারে সরকারের জিরো টলারেন্স অবস্থান রয়েছে। হাইকোর্টে মামলা চলমান থাকায় কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এ কারণে, যেসব পয়েন্টে আইনগত বাধা নেই, সেখানেই আমরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। আইনগত বাধা দূর হলে, নদীকে সম্পূর্ণ অবৈধ দখল মুক্ত করা হবে। সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদী পুনরুদ্ধার ও খননের পাশাপাশি, দু,পাড়ে হাঁটার জন্য রাস্তাও তৈরি করা হবে।
Leave a Reply