পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে সব নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে গোপনে কলেজের পরিচালনা পর্ষদ গঠণের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা কলেজের কর্মচারীদের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে তা আত্মসাত করেছেন তিনি। এ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলামের কাছে অনিয়ম-ই এখন নিয়ম।
কয়েকজন অভিভাবক সদস্য, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে কথা বলে জানা গেছে, ছাইকোলা ডিগ্রী কলেজের পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে। এর আগেই কলেজে অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বর্তমান কমিটির কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে, নির্বাচন পরিচালনার জন্য কোন কমিটি গঠণ, প্রিজাইডিং অথবা রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ না করে, অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য কোন প্রকার নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা না করে, গোপনে নিজের ইচ্ছেমতো একটি কমিটি গঠণ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে তা অনুমোদন করিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, অধ্যক্ষ সকল প্রকার নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বর্তমান কমিটির সভাপতিকেই পুনরায় সভাপতি করে এই করোনাকালীন সময়ে কমিটি গঠন করেছেন। অভিভাবক সদস্যদের বাদ দিয়ে, নির্বাচন না করে, নিজের ইচ্ছেমতো ৩ জন অভিভাবক সদস্য মনোনীত করেছেন। পরিচালনা পর্ষদের শিক্ষক প্রতিনিধিও নিজের ইচ্ছেমতো করেছেন। নিজেই মনোনীত করেছেন বিদ্যোৎসাহী সদস্য।
সদ্য শেষ হওয়া কমিটির অভিভাবক সদস্য ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ইউসুফ আলী বলেন, সভা না করেই মাঝে মধ্যে আমার বাড়িতে গিয়ে অধ্যক্ষ নানা কথা বলে রেজুলেশনে স্বাক্ষর নিয়ে আসতেন। কলেজের স্বার্থেই আমি সই করেছি। এখন শুনছি গোপনে কলেজের পরিচালনা পর্ষদ গঠণ করা হয়েছে। অথচ আমরা কেউ কিছু জানিনা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক রবিউল করিম খান, মনিরুজ্জামান মনি, সোলেমান প্রামানিক সহ কয়েকজন বলেন, লোকমুখে শুনেছি কলেজের নতুন কমিটি গঠন হয়েছে। অথচ কবে কিভাবে হলো তার কিছুই জানলাম না। শিক্ষার্থী বা অভিভাবক কাউকে কিছু জানায়নি। কোনো নোটিশও করেনি। কয়েকজন শিক্ষার্থীও জানালেন একই কথা।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি, ছাইকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, কোন নিয়মনীতির বালাই নেই এই কলেজটিতে। স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন অধ্যক্ষ সাইফুল। এক সময় আমি ওই কলেজের সভাপতি ছিলাম, তার দূর্নীতি আর অনিয়ম না মানার কারণে সভাপতি আর থাকতে পারিনি।
ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা কলেজের কর্মচারীদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে আত্মসাত করেছেন অধ্যক্ষ। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর পর, তা রহস্যজনক কারণে ধামাচাপা পড়ে যায়।
এ বিষয়ে কথা হয় অধ্যক্ষ মোঃ সাইফুল ইসলামের সাথে। অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোন প্রকার সদুত্তর দিতে পারেননি এবং তার স্বপক্ষে কোনো প্রমানাদি দেখাতে পারেননি।
অধ্যক্ষ বলেন, করোনাকালীন সময়ে ব্যাপক প্রচার না করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে সবকিছু করা হয়েছে। নির্বাচনী তফসিল, কমিটির রেজুলেশনসহ আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, কাগজপত্র সব বাসায় আছে। পরে দেখাতে পারবো। উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
কলেজে কম্পিউটার শিক্ষক আছে কিনা জানতে চাইলে, তিনি বলেন আছে। তবে কাজ ভালো পারেনা। তাই কলেজের সমস্ত কাজ বাইরে থেকে করতে হয়। এতে কলেজের অর্থ অপচয় ও লুটপাট হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ কোন জবাব দেননি। উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
অধ্যক্ষ সাইফুল আরও বলেন, বর্তমান সভাপতি আব্বাস উদ্দিনকে নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ করা হয়। এছাড়া দু’জন শিক্ষককে সদস্য করা হয়। এর মধ্যে একজন একই কলেজের সহকারী অধ্যাপক উত্তম গোস্বামী। আরেকজনের নাম তিনি বলতে পারেননি।
তাৎক্ষনিক কলেজ সভাপতি আব্বাস উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কেন প্রিজাইডিং অফিসার হবো? আমি তো কিছুই জানিনা। অধ্যক্ষ কি করেছেন, তিনিই ভাল জানেন।
সহকারী অধ্যাপক উত্তম গোস্বামী বলেন, আমি পরিচালনা পর্ষদ গঠনের বিষয়ে কিছুই জানিনা। আমি কবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য হলাম?
কলেজ পরিচালনা পর্ষদ গঠণ, অভিবঅবক সদস্য নির্বাচন বিষয়ে জানতে চাটমোহর মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ মাহমুদ সরকার সঞ্জুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেই কেবল অভিভাবক সদস্য নির্বাচন করতে হবে। একাধিক প্রার্থী না থাকলেও নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। কলেজের সভাপতি রিটার্নিং কিংবা প্রিজাইডিং অফিসার কিভাবে হতে পারে, তা আমার জানা নেই।
চাটমোহর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মগরেব আলী বলেন, এ বিষয়ে তাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। তারা কিছু জানেনও না। তবে করোনাকালে কলেজগুলোতে আহবায়ক কমিটি গঠন করে চালানোর কথা রয়েছে। তিনি অধ্যক্ষের সাথে কথা বলে পরে বিস্তারিত জানাবেন বলে জানান। তবে একদিন পার হলেও তিনি আর কিছু জানাননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈকত ইসলাম বলেন, কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি। যদি অভিযোগ পাই, তাহলে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাবোর্ডে লিখবো।
Leave a Reply