পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পর এবার প্রকল্প পরিচালকের সাথে বিরোধে জড়ালেন দুই বিতর্কিত শিক্ষক। বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে শুরু থেকেই সদ্য বিদায়ী ভিসির সাথে বিরোধ ছিল তাদের। সেই বিরোধের রেশ কাটতে না কাটতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) আজিজুর রহমান ও মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ড. এম আবদুল আলীম পরষ্পর পরষ্পরের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদ শুন্য থাকায় পুরো বিশ^বিদ্যালয়ে এক ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, ফলে ঘটছে নানা ঘটনা। পাবনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জিডির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পাবিপ্রবির প্রায় পাঁচশত কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও নির্মাণকাজ পরিদর্শন করতে আসেন। তিনি আসার পর সাবেক ভিসি প্রফেসর এম রোস্তম আলীর বিপক্ষ গ্রুপের ১০/১২ জন শিক্ষক তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রকল্পের পিডি নিয়োগে অনিয়মসহ প্রকল্পের ১০ কোটি টাকার বই ক্রয়ে অনিয়মসহ বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকা অডিট আপত্তির বিষয়টি অবহিত করেন এবং সেগুলোর প্রমাণের কাগজপত্র তুলে ধরেন। শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. হারুন-অর রশিদ, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এম আবদুল আলীম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. লোকমান হোসেন, সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আওয়াল কবির, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামরুল হাসান, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রানা প্রমুখ।
সূত্র আরও জানায়, অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে সভা হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা হাসিবুর রহমানের কক্ষে একটি বেসরকারী টেলিভিশনের সাংবাদিকের সামনে (মাছরাঙা টেলিভিশিনের উত্তরাঞ্চলীয় ব্যুরো চিফ উৎপল মির্জা) প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) জি এম আজিজুর রহমানের সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে পিডির সঙ্গে দশ কোটি টাকার বইক্রয়ে অনিয়ম ও পিডির নামে কোটি কোটি টাকা আর্থিক অনিয়মের অডিট আপত্তি নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। তখন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিজন ব্রহ্মসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। পরে মাছরাঙা টেলিভিশনে ‘পাবিপ্রবিতে দুর্নীতির অভিযোগ’ শিরোনামে ধারাবহিক খবর প্রচারিত হওয়ার পর প্রকল্প পরিচালক আজিজুর রহমান তার নামে কুৎসা রটনা, ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ তুলে দুই শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে পাবনা সদর থানায় একটি জিডি করেন। পরে ড. আবদুল আলীম পাল্টা আরেকটি জিডি করেন প্রকল্প পরিচালক আজিজুর রহমানের নামে। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ১০ কোটি টাকার বইক্রয়ে অনিয়ম ও প্রকল্পে কোটি কোটি অনিয়ম বিষয়ে পিডি আজিজুর রহমানের নামে অডিট আপত্তির বিষয়ে বলতে গেলে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং তার লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করার হুমকি দেন। তিনি আগ্নেয়াস্ত্রটি পুলিশের হেফাজতে নেওয়ার জন্যে এবং তাঁরসহ অন্য শিক্ষকদের নিরাপত্তা প্রদানের অনুরোধ করে জিডিটি করেন। একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লে. কর্ণেল (অব.) আজিুর রহমান উগ্র মেজাজের মানুষ। সবসময় তাঁর সঙ্গে লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র থাকে যেটি দিয়ে ক্যাম্পাসের অনেককেই তিনি ইতিমধ্যে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক লে. কর্ণেল জি এম আজিজুর রহমান দুই শিক্ষকের নামে জিডি করার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক আওয়াল কবীর জয় এবং ও মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ড. এম আবদুল আলীম তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যে তথ্য দিয়েছেন। এই মিথ্যে খবরে জাতি বিভ্রান্ত হতে পারে। একই সাথে ড. আল নকীব চৌধূরী উপাচার্য থাকাকালে ড. আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধেও কয়েক কােটি টাকার বই ক্রয় নিয়ে দূর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং তা ওই সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বই ক্রয়ে দূর্নীতি বা চুরি নিয়ে তৎকালীন সময়ে যা ব্যপক আলোচিত ও সমালোচিত হয়।
জিডির করার কথা স্বীকার মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ড. এম আবদুল আলীম বলেন, তাকে লাইন্সেস করা পিস্তল দিয়ে গুলি করার কথা পিডি সাহেব বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন। তাই জীবনের নিরাপত্তায় থানায় জিডি করেছি।
তবে উপস্থিত সংবাদকর্মীর নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার সামনে কথা কাটাকাটি হয়েছে, তবে অস্ত্রেও বিষয়ে আমি থাকা কালীন সময়ে কোন প্রকার কথা হয়নি।
পাবিপ্রবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, ‘উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। অভিভাবক না থাকলে যা হয়। পাল্টাপাল্টি জিডির ঘটনা তারই প্রমাণ। নিরাপত্তা কর্মকর্তার কক্ষে শিক্ষকদের সঙ্গে প্রকল্প পরিচালকের কথা কাটাকাটির ঘটনা আমার সামনেই ঘটেছে, তবে ভয়-ভীতি প্রদর্শনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
Leave a Reply