পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মানাধীন পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটে রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে রূপপুর প্রকল্প সাইটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যোগদান করেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সাথে যৌথভাবে রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের চুড়ান্ত পর্যায়ের কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
রূপপুর প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের রিয়্যাক্টর কম্পার্টমেন্টে স্থাপিত রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেলটির ওজন ৩৩৩.৬০ টন, দৈর্ঘ্যে ১১.১৮ মিটার, এবং ব্যাস ৪.৫৭ মিটার। কয়েকটি ধাপে স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়। লেইবার ১১৩৫০ হেভী ক্রেনের সাহায্যে রিয়্যাক্টর ভেসেলটি ট্রান্সপোর্ট পোর্টালে স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে একটি বিশেষ পরিবহন ট্রলির সাহায্যে এটিকে রিয়্যাক্টর কম্পার্টমেন্টের সেন্ট্রল হলে আনা হয়। অতঃপর পোলার ক্রেনের সাহায্যে এটিকে ভার্টিক্যাল অবস্থায় আনার পর রিয়্যাক্টর শ্যাফটের সাপোর্ট রিং-এ বসানো হয়।
রাশিয়ার এইএম টেকনোলিজি রূপপুর প্রকল্পের জন্য রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল নির্মাণ করে। ইন্সটলেশনের প্রয়োজনীয় রেগুলেটরী চাহিদা পূরণসংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করার পর এটি ইন্সটল করা হয়।
দ্বিতীয় ইউনিটের রিয়্যাক্টর ভেসেল স্থাপনের গুরুত্ব তুলে ধরে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে রসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ বলেন, “এক বছর পূর্বে প্রথম ইউনিটে রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেলের স্থাপনের স্বাক্ষী ছিলাম আমরা, এবং আজকে দ্বিতীয় ইউনিটেও একই বিষয় আবারো প্রত্যক্ষ করলাম। করোনা মহামারীতে সৃষ্ট বিভিন্ন বিপত্তি কাটিয়ে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মান কাজ সক্রিয়ভাবে এগিয়ে চলছে। নির্মান কাজের সঙ্গে যুক্ত পুরো টীমকে তাদের সমন্বিত কার্যক্রমের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। রূপপুর প্রকল্পের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন প্রদানের জন্য আমি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বাংলাদেশের জনগন অধীর আগ্রহে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছেন এবং আমরা প্রতিদিনই একটু একটু করে সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি”।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য রুশ সরকার এবং বন্ধুপ্রতীম রুশ জনগনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “ভিভিইআর, জেনারেশন থ্রি-প্লাস রিয়্যাক্টর সমন্বয়ে নির্মিত এই কেন্দ্রের দুইটি ইউনিট থেকে, প্রতি ইউনিটে ১,২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে, যা দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পারমাণবিক প্রযুক্তির মত একটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিশেষ যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা সৃষ্টি হবে। কার্বন নিঃসরণ হবে না বিধায় এটি পরিবেশ বান্ধব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক হবে”।
রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আগত রসাটমের মহাপরিচালক অনুষ্ঠান শেষে রূপপুর এনপিপি সাইটে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। নতুন ও আধুনিক এই কেন্দ্রটিতে রূপপুর এনপিপির পরিচালনার সঙ্গে যেসকল বাংলাদেশী যুক্ত থাকবেন তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। বিশেষায়িত শ্রেণীকক্ষ ছাড়াও স্টেট-অফ-দা-আর্ট ইকুইপমেন্ট সজ্জিত বিশেষ স্থাপনায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন বিশেষজ্ঞরা। রুশ পক্ষ এই প্রশিক্ষনের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগত প্রোগ্রাম প্রণয়ন করেছেন, যা ব্যবহার করে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পক্ষ নিজেরাই তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম হবেন।
আলেক্সি লিখাচেভ তার সফর কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং রসাটমের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়টি আলোচনায় স্থান পাবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি ইউনিটে স্থাপিত হচ্ছে ৩+ প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর ১২০০ রিয়্যাক্টর। প্রকল্পটির মোট উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২,৪০০ মেগা-ওয়াট। এই রিয়্যাক্টরগুলো সকল আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চাহিদা সম্পূর্ণভাবে পূরন করতে সক্ষম। ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত জেনারেল কন্ট্রাকটের অধীনে রসাটমের প্রকৌশল শাখা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে।
Leave a Reply